ব্লগ কি? কীভাবে ব্লগিং করা যায়? ব্লগিং করে কীভাবে টাকা ইনকাম করা যায়?

একটা সময় ছিল যখন তথ্য খোঁজার জন্য বা নতুন কিছু জানার জন্য মানুষ বিভিন্ন বই কিনে পড়তো। বর্তমানে সে সময়ের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন বই পড়া থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে অনলাইনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট বর্তমান সময়ের একটি পপুলার আয়ের উৎস। প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট নির্ভর স্টার্টআপ তৈরি হচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে দিচ্ছে। অনলাইনে নিজের ট্যালেন্ট দেখিয়ে আমরা একইসাথে আরও দক্ষ হচ্ছি এবং নিজেদের আয়ের পথ তৈরি করছি। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা ব্লগ কি? কীভাবে ব্লগিং করা যায়? ব্লগিং করে কীভাবে টাকা ইনকাম করা যায়? এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আশাকরি পুরো পোস্ট পড়ে ব্লগিং সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।  

ব্লগ কি?

ব্লগ হলো একটি অনলাইন ডাইরি। আমরা নিজেদের পার্সোনাল লাইফ অথবা কোন ভালো লাগা কাজ নিয়ে প্রতিদিন ডাইরিতে লিখে রাখি। ব্লগ এই পার্সোনাল রাইটিং এর অনলাইন ভার্শন। ব্লগ শব্দটি এসেছে ইংরেজি ওয়েবব্লগ নামক শব্দ থেকে। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে জন বার্গার নামক এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ওয়েবব্লগ শব্দ আবিষ্কার এবং ব্যবহার করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে পিটার মেরহোলজ নামক একজন ব্লগ লেখক ওয়েবব্লগ থেকে ওয়েব সরিয়ে শুধু ব্লগ শব্দটি ব্যবহার করেন।

ব্লগ এবং ওয়েবসাইট একই ধরনের হলেও এদের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। ব্লগ নিয়মিত আপডেট করা হয় কিন্তু ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করা হয়না। অর্থাৎ ব্লগে প্রতিদিন নিত্য নতুন তথ্য যোগ হয়। কিন্তু ওয়েবসাইট প্রতিদিন আপডেট না হয়ে সপ্তাহে বা মাসে আপডেট করা হয়।

ব্লগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে টেক্সট নির্ভর ব্লগ সব থেকে বেশি প্রচলিত। এর বাইরে আরও কিছু ব্লগ আছে যা ধিরে ধিরে পপুলার হচ্ছে। যেমন আর্টব্লগ, ভিডিওব্লগ, ফটোব্লগ, পডকাস্টিং, মাইক্রোব্লগিং ইত্যাদি।

একটি ব্লগ সাধারন কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তৈরি করা হয়। যেমন খাবার নিয়ে ব্লগ অথবা টেকনোলজি নিয়ে ব্লগ ইত্যাদি। আপনি যদি কোন একটি বিষয়ে দক্ষ হন তাহলে ব্লগ লিখে সেই দক্ষতা পুরো পৃথিবীর মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। নিত্যনতুন আবিষ্কার বা বিভিন্ন নিউজ মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

সিপিএ মার্কেটিং কিভাবে শিখবো? সিপিএ মার্কেটিং করে আয়

ব্লগ লিখে মানুষকে তথ্য দেওয়া ছাড়াও অ্যাফিলিয়েট অথবা মনিটাইজেশন ইউজ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায় সহজেই।

কীভাবে ব্লগিং করা যায়?

কীভাবে ব্লগিং করা যায়?

কীভাবে ব্লগিং করা যায় তা জানার আগে আমাদের ব্লগিং করতে কি কি প্রয়োজন তা জানতে হবে। ব্লগিং করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা নিছে দেওয়া হলো।

  • ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল অথবা ডেক্সটপ কম্পিউটার
  • ইন্টারনেট লাইন অথবা মডেম
  • জিমেইল অথবা যে কোন মেইল অ্যাড্রেস
  • ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরির প্লাটফর্ম (ফ্রী অথবা পেইড)

আপনার কাছে যখন উপরে বর্ণিত সবকিছু থাকবে তখন আপনি ব্লগিং শুরু করতে পারবেন। এখন চলুন কীভাবে একটি ব্লগ শুরু করবেন সে ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।

ফ্রী মেথড

আপনি ফ্রী তে দুইটি মাধ্যম ইউজ করে ব্লগ শুরু করতে পারবেন। যদিও বেশীরভাগ সফল ব্লগ পেইড মাধ্যমে তৈরি কিন্তু শুরু করার জন্য ফ্রী মাধ্যম একটি ভালো অপশন।

ওয়ার্ডপ্রেস: ওয়ার্ডপ্রেস একটি পপুলার কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে সহজেই যে কোন ফ্রী থিম ইউজ করে সুন্দর সুন্দর ওয়েবসাইট এবং ব্লগ তৈরি করা যায়। আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এর ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফেলবেন। অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর লগইন করবেন। লগইন করার পর সেখানে নতুন একটি ব্লগ খোলার বিভিন্ন অপশন পাবেন। আপনার ওয়েবসাইটের নাম এবং ইউআরএল অ্যাড্রেস দিয়ে ক্রিয়েট বাটনে ক্লিক করলে আপনার দেওয়া নামে একটি ব্লগ তৈরি হয়ে যাবে।

ওয়ার্ডপ্রেস তাদের ফ্রী ব্লগ সার্ভিসে ফ্রী ডোমেইন এবং কিছু হোস্টিং স্পেস ফ্রী দেয়। আপনি আলাদা কোন ডোমেইন বা হোস্টিং না কিনেই ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া ওয়ার্ডপ্রেস অনেক ফ্রী ব্লগ থিম প্রোভাইড করে যা দিয়ে সুন্দর সুন্দর ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। আপনি চাইলে পেইড থিম ইউজ করতে পারবেন।

ব্লগার: ব্লগার গুগলের একটি সার্ভিস। আপনি ব্লগার ইউজ করে ওয়ার্ডপ্রেসের মত যে কোন ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। তবে ফ্রী ব্লগ তৈরি করার জন্য ব্লগার ওয়ার্ডপ্রেসের থেকেও অনেক ভালো সার্ভিস দেয়। গুগলের নিজস্ব সার্ভিস হওয়ার কারনে গুগলে তারাতারি ইনডেক্স হয়। ব্লগারে ব্লগ তৈরি এবং মেইন্টেইন করা আরও বেশি সহজ। কারন ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ড অনেক বেশি অপশন থাকায় প্রথম প্রথম কঠিন মনে হয়। সে দিক থেকে ব্লগারের ইউজার ইন্টারফেস এবং ড্যাশবোর্ড অনেক সহজ আর ক্লিন।

ব্লগারে ব্লগ তৈরি করার জন্য অনেক পাওয়ারফুল থিম পাওয়া যায়। কাস্টম থিম ইন্সটল করার সুবিধা বাদেও যে কোন প্রি-মেইড থিম ইন্সটল দিয়ে ব্লগ লেখা শুরু করে দেওয়া যায়। ওয়ার্ডপ্রেসের মত ব্লগার ফ্রী ডোমেইন এবং ১৫ জিবি ফ্রী হোস্টিং প্রোভাইড করে।

ব্লগিং করে কীভাবে টাকা ইনকাম করা যায়?

ব্লগিং করে কীভাবে টাকা ইনকাম করা যায়?

ব্লগ লিখে আয় করার অনেকগুলো উপায় আছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

অ্যাডসেন্স: ব্লগ থেকে আয় করার সবথেকে কার্যকরী উপায় হলো অ্যাডসেন্স। বর্তমান সময়ে যারা ব্লগ তৈরি করে তাদের সর্বপ্রথম উদ্দেশ্য থাকে অ্যাডসেন্স থেকে ইনকাম করা। মূলত অ্যাডসেন্স অন্যান্য মাধ্যম থেকে ব্লগকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারন ব্লগে সবসময় ইউনিক এবং রেগুলার ভিজিটর থাকে আর অ্যাডসেন্সের প্রধান উদ্দেশ্য ভিজিটরকে অ্যাড দেখানো। ব্লগের মাধ্যমে তাদের এই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণভাবে হাসিল হয়। আপনি একটি ব্লগ তৈরি করে সেখানে অ্যাডসেন্স অথবা অন্য কোন অ্যাড নেটওয়ার্ক দিয়ে মনিটাইজ করে প্রতি মাসে অনেক ভালো একটা অ্যামাউন্ট আয় করতে পারবেন।

অ্যাফিলিয়েট: একটি ব্লগ সাইটে আপনি একই সাথে অ্যাডসেন্স এবং অ্যাফিলিয়েট ইউজ করতে পারবেন। ব্লগ সাইট সাধারণত সচল থাকে এর হিউজ ভিজিটরের কারনে। অন্যদিকে ব্লগ যেহেতু কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তৈরি করা হয় সেহেতু এর ভিজিটর একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্লগ ভিজিট করে। অ্যাফিলিয়েট করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভিজিটরকে কাস্টমারে রূপান্তর করে পণ্য বিক্রি করা। সে দিক থেকে আপনি যে নিস বা টপিকের উপর ব্লগ তৈরি করেছেন সেই নিস বা টপিকের উপর অ্যাফিলিয়েট করতে পারবেন।

পেইড প্রোমোশন: ব্লগ যখন অনেক পপুলার হয় তখন মানুষ গুগলে সার্চ করা বাদেও ডাইরেক্ট ইউআরএল দিয়ে ব্লগ ভিজিট করে। এরকম একটি পপুলার ব্লগ মানুষ পেইড প্রোমোশনের জন্য সহজেই নির্বাচন করে। এভাবে আপনার ব্লগে বিভিন্ন পেইড প্রোমোশন করে আপনার আয় বৃদ্ধি করে নিতে পারবেন।

গেস্ট পোস্ট: একটি ব্লগ যখন মানুষ পছন্দ করা শুরু করে তখন তার আয়ের উৎস অনেকগুণ বেড়ে যায়। তেমন অনেক উৎসের মধ্যে গেস্ট পোস্ট অন্যতম। একটি নতুন ব্লগ যখন তৈরি করা হয় তখন মার্কেটে ঠিকমত প্রবেশ করার জন্য তার গেস্ট পোস্ট করার দরকার পরে। গেস্ট পোস্ট করার মাধ্যমে ব্লগের এসইও যেমন শক্তিশালি হয় তেমনি বেশি বেশি ভিজিটর পাওয়া যায়। আপনার ব্লগ যখন ভালো ভিজিটর পাবে তখন ওই সেম নিসের অন্যান্য ব্লগ আপনার ব্লগে গেস্ট পোস্ট করতে চাইবে। আপনার ব্লগের রেপুটেশন অনুযায়ী আপনাকে টাকা অফার করবে। এভাবে অন্যের গেস্ট পোস্ট নিজের ব্লগে পাবলিশ করেও আয় করা যায়।

নিজের সার্ভিস বিক্রি: আপনার ব্লগে আপনি অন্য সার্ভিস যেমন প্রমোট করতে পারেন তেমন নিজের সার্ভিস সেল দিতে পারবেন। ধরুন আপনি বই লিখেন এবং রকমারিতে বিক্রি করেন। এখন আপনি চাইলেই সেই বই আপনার নিজের ব্লগে বিক্রি করতে পারবেন। বর্তমানে এভাবে অনেক ব্লগার তাদের বিভিন্ন সার্ভিস অনলাইনে ব্লগের মাধ্যমে বিক্রি করে।

সিপিএ মার্কেটিং কি? সিপিএ মার্কেটিং করতে কি কি লাগে?

অনলাইনে ইনকামের অনেক অনেক পথ খোলা আছে। আমাদের শুধু নির্দিষ্ট একটি পথ বেঁছে নিতে হবে। সে দিক থেকে ব্লগিং একটি সহজ এবং সোজা পথ। আজকের পুরো লেখায় ব্লগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি এখন আপনার মনে ব্লগ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়েছে। ব্লগ নিয়ে বা ব্লগিং করে ইনকাম করা নিয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন ধন্যবাদ। 

Leave a Reply