বর্তমান যুগ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে ঝুঁকে পরছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় কেনাকাটা ও পেমেন্টের ক্ষেত্রে বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ তারা মার্কেটে যাওয়ার সময় কোন প্রকার ক্যাশ সাথে করে নিয়ে যায় না। এটি ধীরে ধীরে ফিজিক্যাল লেনদেন থেকে ক্রিপ্টো নামক ডিজিটাল কারেন্সিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষ অনেক মোটা অঙ্কের অর্থ ক্রিপ্টোতে ইনভেস্ট করছে। আমাদের আজকের লেখায় আমরা বিটকয়েন ট্রেডিং কি এবং কীভাবে কাজ করে? এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বিটকয়েন ট্রেডিং কি এবং কিভাবে কাজ করে?
বিটকয়েন ট্রেডিং কি তা বুঝতে আমাদের বিটকয়েন ইনভেস্ট এবং ট্রেডিং সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে বিটকয়েন ট্রেডিং ও ইনভেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিটকয়েন ইনভেস্ট
বিটকয়েন তথা সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি টিকে আছে লংটার্ম এবং শর্টটার্ম বিনিয়োগের উপরে। যে ক্রিপ্টোতে যত বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে তার দাম তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট ও বেড়ে চলছে। সাধারণত বিটকয়েন ইনভেস্টমেন্ট পরিচালিত হয় লংটার্ম চিন্তা ভাবনা নিয়ে। অর্থাৎ ক্রিপ্টোতে ইনভেস্ট করা মানে একটা লম্বা সময়ের জন্য কয়েন কিনে রাখা কে বোঝায়।
অন্যদিকে এর থেকে লাভ ও লসের হিসেব করতে হলে অনেক লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। যদিও এতে লাভ হলে অনেক বেশি অথবা লস হলেও অনেক বেশি হয়। তারপরেও যাদের বিটকয়েনের প্রতি এবং এই টেকনোলজির প্রতি আকর্ষণ আছে তারা এখানে ইনভেস্ট করতে বেশি উৎসাহিত হয়।
বিটকয়েন ট্রেডিং
আর সকল ট্রেডিং এর মতই বিটকয়েন ট্রেডিং একই জিনিস। অর্থাৎ সঠিকভাবে মার্কেট রিসার্চ করে তারপর অল্প সময়ে লাভের আসা করে রিস্ক নিয়ে যে ইনভেস্ট করা হয় তাকে ট্রেডিং বলে। যেমন একজন ট্রেডার যখন দেখে মার্কেটে বিটকয়েনের দাম অনেকদিন থেকে স্টাবল আছে তবে যে কোন মুহূর্তে বৃদ্ধি পাবে। তখন উক্ত ট্রেডার কিছু পরিমাণ বিটকয়েন কিনে রাখবেন যা ১৫ দিন বা ১ মাসের মধ্যে দাম বৃদ্ধি পেলে আবার বিক্রি করে দিবে। এতে দেখা যায় লাভের পরিমাণ একজন ইনভেস্টর এর সমান না হলেও স্বল্প সময়ে আর্থিক লাভবান হওয়া যায়।
বিটকয়েন ট্রেডিং কিভাবে কাজ করে?
এটি আর সকল গতানুগতিক ট্রেডিং সিস্টেমের মতই কাজ করে। অর্থাৎ বিটকয়েন ট্রেডিং করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি এক্সচেঞ্জ মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। কারণ ট্রেডিং করার পূর্বশর্ত হচ্ছে মার্কেট সম্পর্কে এবং দামের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা।
এই বিষয়ে সকল ধরনের তথ্য আপনি এক্সচেঞ্জ মার্কেটপ্লেসে পাবেন। বর্তমানে বাইন্যান্স BTC তথা Crypto এক্সচেঞ্জ ও ট্রেডিং এ সব থেকে বেশি এগিয়ে আছে। এর নিজস্ব কয়েন থাকার পাশাপাশি এটি তাদের প্ল্যাটফর্ম ইউজ করে অন্যান্য পপুলার ক্রিপ্টো ক্রয়-বিক্রয় করার সুবিধা প্রদান করে। নিচে বাইন্যান্স ব্যবহার করে কীভাবে বিটকয়েন ট্রেডিং করা যাবে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হলো।
বাইন্যান্স এর মাধ্যমে বিটকয়েন ট্রেডিং
বর্তমানে যতগুলো ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ আছে তার মধ্যে নতুনদের জন্য বাইন্যান্স সব থেকে উৎকৃষ্ট। কারণ এর ফিচার এবং পরিচালনা পদ্ধতি অনেক সহজ এবং সাবলীল। একটু পরিশ্রম করলেই যে কেউ এই মার্কেট সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে যে মার্কেটে আপনি কাজ করবেন সেটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। সর্বোপরি বাইন্যান্সে বিটকয়েন ট্রেডিং করে আপনি সহজেই লাভবান হতে পারবেন।
বাইন্যান্সে ট্রেডিং করতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। অ্যাকাউন্ট হয়ে যাওয়ার পর তাতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়ে ভেরিফাই করে নিতে হবে। সব হয়ে গেলে সিকিউরিটির জন্য আপনাকে টু-স্টেপ অথেনটিকেশন চালু করে নিতে হবে। এতে আপনার অ্যাকাউন্টে একটি এক্সট্রা সিকিউরিটি লেয়ার অ্যাড হবে।
তারপর নিম্নোক্ত ধাপগুলো ফলো করে সহজেই আপনি ট্রেন্ডিং শুরু করতে পারবেন।
মার্কেট অ্যানালাইসিস
একজন ট্রেডার হিসেবে আপনাকে যেটা সব থেকে বেশি গুরুত্ব সহকারে করতে হবে তা হচ্ছে মার্কেট অ্যানালাইসিস। ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট কখনো স্টাবল থাকে না। মার্কেটে যতগুলো কয়েন আছে তাদের ভালু কমার সাথে সাথে পপুলারিটি কমে যায়। অর্থাৎ আজকে যদি কোন নতুন কয়েন মার্কেটে আসে এবং বেশি পরিমাণে বোনাস ঘোষণা করে তাহলে দুই এক দিনের মধ্যে সেই কয়েন পপুলার হয়ে যাবে।
তবে এদের মধ্যেও কিছু কয়েন আছে যেগুলো সবসময় ১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকে। যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, ডজকয়েন ইত্যাদি। ট্রেডিং করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনাকে কোন কয়েনের উপর ইনভেস্ট করবেন তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। এই জন্য আপনি সর্বপ্রথম কিছুদিন মার্কেট সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
তারপর কোন কোন কয়েন দীর্ঘসময় ধরে স্টাবল আছে এবং ভালু আপ-ডাউন স্বাভাবিক আছে তা পর্যবেক্ষণ করবেন। এতে কয়েন মার্কেটের আচরণ হিসেবে ধারণা পাবেন যা কোন কয়েনের ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে। এতে আপনি শর্ট টার্ম অথবা লং টার্মে ইনভেস্ট এবং ট্রেডিং করতে পারবেন।
টোকেন সিলেকশন
একটা লম্বা সময় ধরে মার্কেট রিসার্চ করার পর আপনি একাই বুঝে যাবেন কোন কয়েনের উপর ইনভেস্ট করা ভালো হবে। তবে মার্কেটারদের মতে যে কয়েন গুলা সবার কাছে পরিচিত এবং অনেকদিন ধরে মার্কেটে আছে সেগুলোর উপর ইনভেস্ট করা যুক্তিযুক্ত। সহজ করে বলতে গেলে আপনি বিটকয়েনের উপর ট্রেডিং শুরু করতে পারেন। এর ভালু যেমন অনেক তেমনি অনেকদিন থেকে মার্কেটে থাকার কারণে বর্তমানে অনেক পপুলার প্লাটফর্মে এই কয়েন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ টোকেন সিলেকশন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই স্টাবল ও পরিচিত কয়েন সিলেক্ট করবেন।
রেজিস্টেন্স ও সাপোর্ট মেজারমেন্ট
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি কয়েন তথা বিটকয়েনের পারফর্মেন্স অনুমান করতে পারবেন। বর্তমান কয়েন ট্রেড দেখার জন্য কয়েনমার্কেটক্যাপ ওয়েবসাইট অনেক পপুলার। এখান থেকে আপনার সিলেক্ট করা কয়েন যেমন বিটকয়েনের ভলিউম গ্রাফ দেখতে পাবেন যা থেকে রেজিস্টেন্স ও সাপোর্ট ক্যান্ডেল পরিমাপ করে ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করা যায়।
প্রতিষ্ঠিত মার্কেটারদের মতে ট্রেডিং করার সময় অবশ্যই সাপোর্ট ক্যান্ডেলের উপর দাম নির্ধারণ করতে হয়। এতে যখন কয়েনের দাম বৃদ্ধি পাবে তখন অটোম্যাটিক অ্যাকাউন্টে প্রফিট যুক্ত হবে। অর্থাৎ মার্কেট অ্যানালাইসিস করার পর টোকেন সিলেক্ট করে গ্রাফ থেকে রেজিস্টেন্স ও সাপোর্ট মেজারমেন্ট করে নিতে হবে।
ডিপোজিট
বাংলাদেশ থেকে বাইনান্স ব্যবহার করার সব থেকে বেশি সুবিধা হচ্ছে আপনি সরাসরি বিকাশ ইউজ করে ডলার কিনতে অথবা ডিপোজিট করতে পারবেন। অর্থাৎ বাইনান্সের মাধ্যমে বিটকয়েন ট্রেন্ডিং করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে ডিপোজিট করে নিতে হবে। টাকা লোড করার সময় এখানে আপনাকে কারেন্সি এবং পিয়ার সিলেক্ট করে দিতে হয়। আমাদের দেশ থেকে সচরাচর সবাই বিকাশ থেকে ডিপোজিট করে। এই মাধ্যম ব্যবহার করার জন্য কারেন্সি রাখতে হয় (USDT) এবং পিয়ার হিসেবে উপযুক্ত পিয়ার ব্যবহার করতে হয়।
ইনভেস্ট
ফাইনালি যখন আপনার বাইনান্স অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট থাকবে এবং আপনার কয়েন সিলেক্ট করা থাকবে তখন দেরি না করে ট্রেডিং শুরু করে দিতে পারবেন। তবে সব সময় মনে রাখবেন একজন নতুন ট্রেডার হিসেবে কখনই আপনার সকল মূলধন একবারে ইনভেস্ট করবেন না। অর্থাৎ প্রথমে ৩০ ডলার লোড করে তা থেকে পরিস্থিতি বুঝে ৫% ইনভেস্ট করবেন।
বাইনান্সে আপনি একাধারে কয়েকটি কয়েনের উপর ট্রেডিং করতে পারবেন। যে ক্ষেত্রে আপনার মোট ডিপোজিটের কিছু কিছু অংশ সব কয়েনে ইনভেস্ট হবে এবং তা থেকে আসা অর্থ আপনার অ্যাকাউন্টে যোগ হবে। অ্যাকাউন্টে যোগ হওয়া টাকা আপনি চাইলে পরবর্তী ট্রেডিং এ ব্যবহার করতে পারবেন অথবা ক্যাশ করে নিতে পারবেন।
কিভাবে বিটকয়েন কিনতে হয়?
প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে যে কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন বিটকয়েন কেনা অনেক সহজ। তো আপনি যখন বিটকয়েন কিনতে যাবেন তখন আপনাকে একটি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম এর শরণাপন্ন হতে হবে। বর্তমান সময়ে ইউজের দিক থেকে বাইনান্স সবার উপরের দিকে রয়েছে। কারণ এর ইন্টারফেস ও ব্যবহারবিধি অনেক গোছানো ও সহজ।
তো বিটকয়েন কিনতে হলে আপনাকে প্রথমে কিছু বিষয় নির্ধারণ করে নিতে হবে। যেমন-
- কত পরিমাণে বিটকয়েন কিনবেন?
- কিনে ফেলে রাখবেন?
- ট্রেডিং করবেন?
- অন্য জায়গায় সেল করবেন?
ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। যখন সব প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে থাকবে তখন বাইনান্স থেকে বিকাশের মাধ্যমে ডলার লোড করে বিটকয়েন তথা BTC কিনতে পারবেন।
বিটকয়েন কি? বিটকয়েন এর সুবিধা অসুবিধা
বিটকয়েন দিয়ে কীভাবে পেমেন্ট করব?
বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পেমেন্ট সিস্টেমে বিটকয়েন সুবিধা অ্যাড করেছে। তো এই সকল সাইটে বিটকয়েন দিয়ে কীভাবে পেমেন্ট করবেন?
প্রথমে বিটকয়েন রাখার জন্য আপনার নিজের একটি ওয়ালেট থাকতে হবে। সেটা আপনার ভার্চুয়াল অথবা ফিজিক্যাল দুই ধরনের হতে পারে। তো ভার্চুয়ালভাবে বিটকয়েন দিয়ে পেমেন্ট করার সময় যে সাইটে পেমেন্ট করবেন সেখানে আপনার ওয়ালেট অ্যাড করে নিতে হবে। অ্যাড করার পর সেখানে সাধারণ পেমেন্ট সিস্টেমের মত করে বিটকয়েন দিয়ে পে করতে হবে। সফলভাবে পেমেন্ট হয়ে গেলে নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন।
উপরিউক্ত আলোচনায় বিটকয়েন ট্রেডিং কি এবং কীভাবে কাজ করে? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে প্রায় সকল ধরনের পেমেন্ট ও লেনাদেনা ক্রিপ্টোর মাধ্যমে সংগঠিত হবে।