ভালো রাউটার চেনার উপায়

প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাউটারের চাহিদাও বেড়েছে সমানতালে। যে কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বাজার গুলোতেও রয়েছে অনেক কোম্পানির অনেক ধরনের রাউটারের বাহারি সমাহার। যাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলাদা ফিচার এবং মূল্য।

তাই এত অধিক সংখ্যক রাউটারের ভীড়ে একটি ভালো রাউটার ক্রয় করতে হলে ভালো রাউটার চেনার উপায়, রাউটারের দাম এবং অনু রাউটার এর দাম জানা অতীব জরুরি একটি বিষয়। তবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা মোটেও সহজ নয়। তাই আজকের আর্টিকেলে উপরোক্ত বিষয়সমূহের ওপর প্রয়োজনীয় ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান করা হয়েছে। যাতে আপনারা সঠিক তথ্য আহরণে উপকৃত হতে পারেন।

ভালো রাউটার চেনার উপায়

ভালো রাউটার চেনার উপায়

বর্তমানে বাজারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিছু ব্রান্ড রয়েছে যারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত উন্নত ও আকর্ষণীয় সব ফিচার সমৃদ্ধ রাউটার অফার করে থাকে। কিন্তু আমরা সবাই চাই সবথেকে ভালো রাউটার ক্রয় করতে।

কিন্তু রাউটার ক্রয় করার পূর্বে প্রায়শই আমাদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- কোনটি ভালো রাউটার? বা কোন রাউটারটি আমার জন্য বেশি উপযোগী? আর এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তরের অভাবে আমরা প্রায়ই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকি যে, আমার কোন রাউটারটি কেনা উচিত।

তো প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আর্টিকেলের এই পর্যায়ে এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর আশা করছি পেয়ে যাবেন। যাতে আপনারা কোনোরূপ দ্বিধাদন্দ ছাড়াই নিজের জন্য সবথেকে পারফেক্ট এবং ভালো রাউটার টি ক্রয় করতে পারেন। 

একটি ভালো রাউটার ক্রয় করতে চাইলে আপনাকে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে এবং তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন-

কভারেজ এরিয়া

কভারেজ এরিয়া হলো ঠিক ততটুকু জায়গার পরিমাপ, যতটুকু জায়গায় আপনি রাউটারের সার্ভিস গ্রহণ করতে চান। ভালো রাউটার নির্বাচনের পূর্বে নিজের কভারেজ এরিয়া সম্পর্কে ধারণা নেয়া অতিব জরুরি।

কভারেজ এরিয়া যত বড় হবে, রাউটারও তত বেশি ফ্রিকোয়েন্সির এবং ভালো মানের হতে হবে। সাধারণত আমাদের দেশে ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সির রাউটার সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই এক ব্যান্ডের রাউটার সর্বোচ্চ ৩২ টি ডিভাইস পর্যন্ত সার্ভিস দিতে পারে।

তবে সময়ের সাথে ডুয়েল ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির রাউটারের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। ডুয়েল ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির রাউটার হলো ২.৪ Ghz এবং ৫ Ghz ফ্রিকোয়েন্সির সমন্বয়ে গঠিত রাউটার। একটি ডুয়েল ব্যান্ড রাউটার একটি সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারের দ্বিগুণ অর্থ্যাৎ ৬৪ টি ডিভাইস সমর্থন করতে পারে।

এখন কভারেজ এরিয়া যদি ছোট হয় যেমন- ১-২টি রুম এবং ২-৩টি ডিভাইস, তাহলে সিঙ্গেল ব্যান্ড (Single Band) রাউটার আপনার জন্য যথেষ্ট। এক্ষেত্রে খরচও অনেক কম।

আবার কভারেজ এরিয়া যদি বড় হয় যেমন- ৩-৪ টি রুম এবং ৪-৬টি ডিভাইস তবে সেক্ষেত্রে ডুয়েল ব্যান্ড (Dual Band) রাউটার পছন্দ করা শ্রেয়। নতুবা রাউটারের সার্ভিস নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার বাজেট কিছুটা বাড়াতে হতে পারে।

কিন্তু কভারেজ এরিয়া যদি অনেক বেশি বড় হয় যেমন- কোন অফিস বা অনেক বড় বাসা এবং বেশকিছু ডিভাইস একসঙ্গে পরিচালনা করতে হয়, তাহলে সবথেকে ভালো মানের এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন রাউটারের পাশাপাশি একটি রিপিটার ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে বাজারে একটু বেশি টাকা খরচ করলেই ট্রাই-ব্যান্ড (Tri-Band) রাউটারও পাওয়া সম্ভব।

তাছাড়া এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি যে, আপনার কভারেজ এরিয়া যদি অনেক ছোট হয়, তাহলে তারসহ বা ওয়ার্ড (wired) রাউটার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আপনার কভারেজ এরিয়া যদি বড় হয়, তবে তারবিহীন বা ওয়্যারলেস (wireless) রাউটার ব্যবহার করা সর্বোত্তম। ওয়্যারলেস রাউটার হলো মূলত ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্ভিস প্রদান করে। যে কারণে যেকোন বড় এরিয়াতে সেট আপ করা এবং কনফিগার করা অনেক সহজ।

ডিভাইস সংখ্যা

একটি রাউটার থেকে আপনি যত বেশি সংখ্যক ডিভাইসে নেটওয়ার্ক সংযোগ দিতে চাইবেন, রাউটারের গতিও তত বেশি হতে হবে। কেননা একটি রাউটার থেকে যখন অনেকগুলো ডিভাইসে সংযোগ প্রদান করা হয়, তখন স্বভাবতই রাউটারের পার্ফরমেন্সে চাপ সৃষ্টি হয়। তাই ডিভাইসের সংখ্যা অনুযায়ী রাউটার নির্বাচন করতে হবে।

সাধারণত হোম রাউটারের গতি ১৫০ এমবিপিএস (Mbps) থেকে ৩০০ এমবিপিএস (Mbps) পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রাউটারের গতিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাজারে ১৯০০ এমবিপিএস (Mbps) গতির রাউটারও পাওয়া যায়।

রুম সংখ্যা

হোম রাউটার ক্রয় করতে চাইলে এর পূর্বে বাসার রুম সংখ্যা বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। কেননা রুমের দেয়াল, গ্লাস কিংবা দরজা ভেদ করে সিগন্যাল পৌঁছাতে রাউটারের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই রুম সংখ্যা বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী রাউটারের গতি পরীক্ষা করে রাউটার ক্রয় করতে হবে।

রেঞ্জ

পাশাপাশি এক্ষেত্রে রাউটারের রেঞ্জ এর বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কেননা রাউটারে রেঞ্জ যত বেশি হবে, রাউটার তত বেশি এরিয়া পর্যন্ত সার্ভিস প্রদান করতে পারবে।

একটি ওয়্যার্ড রাউটারের রেঞ্জ সাধারণত ৩০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে ওয়্যারলেস রাউটারের রেঞ্জ ইনডোরে ১৫০ ফুট এবং আউটডোরে ৩০০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। তাই পুরো বাড়ি অথবা অনেক বড় জায়গা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক কভারেজ করতে চাইলে প্রয়োজন একটি রিপিটার অথবা ম্যাশ রাউটার প্যাকেজ। আর যদি wireless রাউটার ১ কি.মি. অথবা 2 কি.মি. পর্যন্ত প্রসারিত করতে চান, তাহলে অবশ্যই আউটডোর রাউটার ব্যবহার করতে হবে।

অনু কি? অনু রাউটারের দাম

অ্যান্টেনা 

একটি রাউটারের অ্যান্টেনা যত বেশি হবে সেই রাউটারের সার্ভিস তত বেশি ভালো হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে একাধিক অ্যান্টেনা সংযুক্ত রাউটার অনেক সুলভ পাওয়া যায়। তাই যদি একসঙ্গে অনেকগুলো ডিভাইসের কানেকশন হ্যান্ডেল করতে হয়, তাহলে একাধিক অ্যান্টেনা সম্বলিত রাউটার ক্রয় করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *