মোবাইল ফোন আমাদের দৈনিন্দ নানান কাজের সঙ্গী। আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে মোবাইল হাতে নেই এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল ইউজ করি। যোগাযোগ রক্ষা করা ছারাও মোবাইল ফোন আমাদের বিনোদনের অন্যতম একটি উৎস।
আমাদের পার্সোনাল জীবনের অনেক স্মৃতি আমরা মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখি। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস অ্যাটাকের কারনে আমাদের এই মূল্যবান তথ্য মাঝে মাঝেই হ্যাক হয়ে যায়। মোবাইল হ্যাক হলে যেমন ডাটা চুরি যায় তেমনি মোবাইল অনেক স্লো হয়ে যায়। এরকম ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস থেকে এন্ড্রয়েড ফোন সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সিকিউরিটি অ্যাপস বা এন্টিভাইরাস অ্যাপ ইউজ করা অতি প্রয়োজনীয়। আমাদের আজকের আয়োজনে আমরা এমন ৫ টি জনপ্রিয় এন্ড্রয়েড সিকিউরিটি অ্যাপস সম্পর্কে জানবো।
৫ টি জনপ্রিয় এন্ড্রয়েড সিকিউরিটি অ্যাপস
এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম। বিশ্বের মোট স্মার্টফোনের ৭২.৪৮ শতাংশ মোবাইলে এন্ড্রয়েড ইউজ করা হয়। এই হিউজ পরিমাণ ইউজার বেস থাকার কারনে হ্যাকার এন্ড্রয়েড সিস্টেম আক্রমণ করার জন্য সবসময় রেডি থাকে। এরকম হ্যাকিং অ্যাটাক বা ম্যালওয়্যার অ্যাটাক থেকে নিজের মোবাইল নিরাপদ রাখতে আমাদের সিকিউরিটি অ্যাপ ইউজ করা জরুরী। চলুন ২০২১ সালের ৫ টি জনপ্রিয় এন্ড্রয়েড সিকিউরিটি অ্যাপ সম্পর্কে জেনে নেই।
বিটডিফেন্ডার মোবাইল সিকিউরিটি
এন্ড্রয়েড সিকিউরিটির দুনিয়ায় বিটডিফেন্ডার একটি বেস্ট এন্টিভাইরাস অ্যাপ। এটি একটি ওয়েল ফিচারড সিকিউরিটি অ্যাপ। বিটডিফেন্ডার সকল দরকারি ফিচার প্রদান করে যা একটি এন্ড্রয়েড ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে যথেষ্ট। এছাড়া বিটডিফেন্ডার আপনার পুরো সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করে বিভিন্ন সিকিউরিটি ইস্যু এবং সেগুলো ঠিক করার বিষয়ে সাজেশন দেয়।
সফল লিড জেনারেশনের কার্যকর ১০টি উপায়
আপনি যদি স্মার্ট ওয়াচ ইউজ করেন তাহলে বিটডিফেন্ডার ইউজ করে এক্সট্রা একটি সিকিউরিটি লেআউট সেট করে নিতে পারবেন। এটি আপনাকে বিভিন্ন ব্রাউজার ইউজ করার সময় রিয়েল টাইম সিকিউরিটি দেয়।
এটি একটি পেইড অ্যাপ এবং প্রতি একবছর ইউজ করার জন্য আপনাকে ১৪.৯৯ ডলার খরচ করতে হবে। আপনি চাইলে ৭ দিনের ট্রায়াল ইউজ করতে পারবেন। একটি লাইসেন্স দিয়ে শুধুমাত্র একটি ডিভাইসে বিটডিফেন্ডার ইউজ করা যায়। কিন্তু লিমিটেড ফিচার ইউজ না করে ফুল ভার্সন ইউজ করা বেশি ভালো হবে। বিটডিফেন্ডারের সাথে ভিপিএন সার্ভিস বাদেও আপনি এন্টি-থিফ এবং প্রাইভেসি অ্যাডভাইজর ছাড়াও আরও অনেক অনেক ফিচার পাবেন।
বিট ডিফেন্ডারের সবথেকে বড় অসুবিধা হলো এর ক্লাউড নির্ভর স্ক্যানিং। অর্থাৎ প্রতিবার ডিভাইস স্ক্যান করার সময় ইন্টারনেট কানেকশন অন করে নিতে হবে। অন্যদিকে এই সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা আছে। আপনি যখন ক্লাউড স্ক্যানিং করবেন তখন আর আলাদাভাবে ভাইরাস ডাটাবেস নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারন ক্লাউডে ভাইরাস ডাটাবেস সাথে সাথে আপডেট হয়ে থাকে।
অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি
অ্যাভাস্ট একটি ফ্রী এন্টিভাইরাস অ্যাপ। ল্যাব টেস্টে অনেক ভালো পজিশনে থাকা এই অ্যাপ মোবাইল সিকিউরিটির জন্য অনেক কাজের। সাধারণত এন্টি-থিফ, ওয়াইফাই সিকিউরিটি, জাঙ্ক ক্লিনিং বাদেও আরও অনেক অনেক ফিচার ফ্রী তে ব্যবহার করা যায়।
আপনি চাইলে অ্যাভাস্ট এর প্রিমিয়াম ভার্সন ইউজ করতে পারবেন। আর ফ্রী ভার্সনে অনেক অ্যাড শো করে যা প্রিমিয়াম ভার্সনে শো করে না। রাম বুস্ট নামক একটি অপশন মোবাইলের পারফর্মেন্স বাড়ানোর জন্য সুন্দর কাজ করে।
প্রিমিয়াম ফিচারে ইন অ্যাপ লকিং নামক একটি অপশন আছে যা অ্যাপ লকার হিসেবে কাজ করে। আপনি চাইলে যে কোন অ্যাপ পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখতে পারবেন। অ্যাভাস্ট এর অ্যাপের ভেতর অ্যাড শো করায় জন্য বিরক্ত লাগতে পারে কিন্তু এর বাইরে ফ্রীতে তারা অনেক ভালো আর কাজের ফিচার দিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছে।
নর্টন মোবাইল সিকিউরিটি
নর্টনকে একটি পরিপূর্ণ ডিফেন্স সিস্টেমের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এতে আছে অ্যাপ অ্যাডভাইজর, এন্টি-থিফ, ওয়াইফাই সিকিউরিটি, কল ব্লকিং, ওয়েব প্রোটেকশন ইত্যাদি ফিচার। অ্যাপ অ্যাডভাইজর আপনার ডিভাইসে অ্যাপ ইন্সটল দেওয়ার আগেই অ্যাপ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে দেবে। অর্থাৎ যে অ্যাপ ইন্সটল দিতে চাচ্ছেন সেটা কোন ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস সংযুক্ত অ্যাপ কিনা এগুলো আগেই জানিয়ে দিবে।
নর্টন অনেক কাজের একটি সিকিউরিটি অ্যাপ হলেও এর প্রাইস অনেক বেশি। একটি মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপের অ্যাভারেজ দাম হিসেব করলে তারা অনেক বেশি দাবী করে। বর্তমানে তাদের অ্যাপের ইয়ারলি সাবস্ক্রিপশন ২৯.৯৯ ডলার যা ১৫% ডিসকাউন্ট থাকার কারনে ১৪.৯৯ ডলার। একটি লাইসেন্স দিয়ে শুধু মাত্র ৩ টি ডিভাইসে নর্টন ইউজ করা যায়।
এভিজি এন্টিভাইরাস
এন্ড্রয়েড সিকিউরিটি অ্যাপের দুনিয়ায় এভিজি অনেক আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে আছে। ২০১৬ সালে অ্যাভাস্ট এভিজি কে কিনে নেওয়ার পর থেকে এটিও অ্যাভাস্টের ইঞ্জিন ইউজ করে। এভিজি একটি অতি শক্তিশালি মোবাইল এন্টিভাইরাস অ্যাপ।
ওয়েব ব্রাউজার কি? সেরা ১০ টি ওয়েব ব্রাউজার
গুগল প্লে ষ্টোরে এভিজির মোট রিভিউ ৭০ লাখের উপরে এবং রেটিং ৪.৭ যেখানে ৫ স্টার সবথেকে বেশি। এন্ড্রয়েড ফোনকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য যেমন ফিচার দরকার সেগুলো সব তারা প্রোভাইড করে। ফিচারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফিচার গুলো হলো- পারফরমেন্স এনহান্সমেন্ট, ভিপিএন সাপোর্ট, জাঙ্ক ক্লিনিং, পারফর্মেন্স বুস্টিং, রিয়েল টাইম সেটিং এবং অ্যাপ স্ক্যানিং ইত্যাদি সহ আরও অনেক অনেক ফিচার।এভিজি এন্টিভাইরাসের প্রায় সব ফিচার প্রিমিয়াম। ফ্রী ভার্সনে লিমিটেড ফিচার সাপোর্ট করে এবং অ্যাপের ভেতর অ্যাড শো করে।
অ্যাভাইরা এন্টিভাইরাস সিকিউরিটি
অ্যাভাইরা সিকিউরিটি মোবাইল এবং কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত এবং কার্যকরী একটি অ্যাপ। এটি ফ্রী ভার্সনে অন্যান্য অ্যাপ থেকে অনেক বেশি ফিচার সাপোর্ট করে। অ্যাভাইরা এন্টিভাইরাসের ডাটাবেস এবং ইঞ্জিন খুব শক্তিশালী। ফ্রী ভার্সন একই সাথে আনলিমিটেড ডিভাইসে ইউজ করা যায়।
যদিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার যেমন ওয়েব প্রোটেকশন প্রো ভার্সনে পাওয়া যায়। তবে ফ্রী ভার্সনে ওয়াইফাই সিকিউরিটি, এন্টি-থিফ, পারমিশন ম্যানেজার, আইডেন্টিটি সেফগার্ড, অ্যাপ লক, ভিপিএন, প্রাইভেসি ম্যানেজার সহ অন্যান্য ফিচার পাওয়া যায়।
অন্যান্য সিকিউরিটি অ্যাপ থেকে অ্যাভাইরা একটু আলাদা হওয়ার কারন হলো এর কার্যক্ষমতা। তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার কার্যকারিতার জন্য ইতোমধ্যে তারা অনেক অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে। রান্সনওয়্যার প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য অন্যান্য এন্টিভাইরাসের মত অ্যাভাইরা কার্যকরী।
এন্ড্রয়েড মোবাইলে সিকিউরিটি অ্যাপ ইউজ করা একটি জরুরী বিষয়। কিন্তু সঠিক এবং ভালো মানের এন্টিভাইরাস সহজে বোঝা যায় না। আশাকরি উপরে বর্ণিত সিকিউরিটি অ্যাপগুলো আপনার এন্ড্রয়েড ডিভাইসে ইউজ করলে সিকিউরিটি নিয়ে আর কোন চিন্তা করতে হবে না। এন্ড্রয়েড সিকিউরিটি অ্যাপ নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।
ভায় এপ্সের নাম গুলো ইংরেজিতে লিখলে অথবা এপ্স গুলোর প্লেস্টোর লিংক দিলে এপ্স গুলো খুঁজে পাইতে সহজ হতো।