সেরা ১০ টি অপারেটিং সিস্টেম

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হলো বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) সম্পন্ন ডিভাইসে ব্যবহৃত এক ধরণের বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবস্হা যা সংক্ষেপে ওএস (OS) নামেও পরিচিত। বর্তমান আধুনিক যুগের সব ডিজিটাল ডিভাইসের প্রাণ হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম বা ওএস।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বের ডিজিটালাইজ প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। যার ফলসরুপ আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিভাইস আবিষ্কৃত হতে থাকে। আজকের আধুনিক কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয় এ সময় থেকেই। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও স্মার্টফোন বিপ্লবের ফলে প্রয়োজন পড়ে সমন্বয়কারী উন্নত সফটওয়্যারের। আর এখান থেকেই মূলত অপারেটিং সিস্টেম নামক বিশেষ সফটওয়্যার এর যাত্রা শুরু হয়।

এখনকার স্মার্টফোন ও কম্পিউটারগুলো একসাথে অনেক ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে সক্ষম। একই সাথে মাল্টিপল সফটওয়্যার ব্যবহার, এদের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার কাজটি করে থাকে অপারেটিং সিস্টেম। একারণে অপারেটিং সিস্টেমকে আপনি মাদার অফ অল সফটওয়্যার বলতে পারেন।

বিশ্বে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। তবে এসবের মধ্যে গুটিকয়েক সিস্টেম পৃথিবীর ডিজিটাল ডিভাইস গুলোতে রাজত্ব করছে। প্রোগ্রামিং এর দুনিয়ায় রাজত্ব সৃষ্টি কারী এমন দশটি অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো-

এন্টিভাইরাস কি? এন্টিভাইরাস এর কাজ কি?

উইন্ডোজ (Windows)

উইন্ডোজ (Windows)

বিশ্বে পার্সোনাল কম্পিউটার এর যাত্রা শুরু হয়  উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার মধ্য দিয়ে। ১৯৮৫ সালে গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ পার্সোনাল কম্পিউটারের যাত্রা শুরু করে।

এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি মাইক্রোসফট। বর্তমানে বিশ্বে যতগুলো কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহৃত হচ্ছে তার ৭০% এই ব্যবহৃত হচ্ছে এই অপারেটিং সিস্টেমটি। 

এই অপারেটিং সিস্টেমটি মূলত অ্যাপ্লিকেশন, ব্রাউজিং, পারসোনাল ইউজ, গেমিং এসবের জন্য বিখ্যাত। তাই বিশ্বের সব প্রান্তের ব্যবহারকারীদের থেকেই সফটওয়্যারটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

উইন্ডোজ ৯৫ সংস্করণ থেকে শুরু করে সর্বশেষ আধুনিক উইন্ডোজ ১০ পর্যন্ত এই লম্বা সময় ধরেই কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের জগতে ফুয়েলের কাজ করেছে এ সফটওয়্যারটি। এই দীর্ঘ সময়ে এর অকল্পনীয় উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। 

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমটিতে ব্যবহার করা আর্কষণীয় ফিচারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-

(১) গ্রফিক্যালি অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় এটি ইউজারফ্রেন্ডলি

(২) এর মধ্যে বিল্ট ইন সিকিউরিটি সিস্টেম ও ফায়ারওয়ালের ব্যবস্হা থাকে। 

(৩)যে কোন মাধ্যম থেকেই খুব সহজে ইনস্টল দেয়া যায়।

উবুন্টু (Ubuntu)

উবুন্টু হলো একটি লিনাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম যা মূলত ওপেন সোর্স ডাউনলোডিং, ব্রাউজিং, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশ ব্যবহার এবং গেমের জন্য বিখ্যাত। এখানে এমন সবকিছুই আছে যা একটি অপারেটিং সিস্টেমে থাকার প্রয়োজন হয়।

উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেমটি সব ধরণের ব্যবহারকারীর জন্য হলেও বিভিন্ন অর্গানাইজেশন, স্কুল-কলেজে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়, তাই একবারের জন্যে হলেও ট্রাই করে দেখতে পারেন।

উবুন্টু সফটওয়্যারটি যৌথভাবে তৈরি করেছে ক্যানোনিক্যাল কোম্পানি ও একটি অনলাইন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি। যা সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে প্রথমবারের মত রিলিজ করা হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল বিনামূল্যের সহজ একটি অপারেটিং সিস্টেম সবার কাছে পৌছে দেয়া।   

এ অপারেটিং সিস্টেমটি মূলত তাদের জন্য যারা অপারেটিং সিস্টেমের পিছনে কোনো প্রকার অর্থ ব্যয় করতে চাচ্ছেন না। একই সাথে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ার কারণে অনেকের কাছেই অপারেটিং সিস্টেমটি বেশ জনপ্রিয়। 

ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম (Mac OS) 

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অপারেটিং সিস্টেমগুলোর একটি হলো ম্যাক ওএস। এ অপারেটিং সিস্টেমটি সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বাজারে নিয়ে আসে প্রযুক্তি জায়ান্ট খ্যাত অ্যাপল কোম্পানি। 

ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমটি অ্যাপল ইউজারদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। তাই এ সফটওয়্যারটি বিশেষ ভালো, অ্যাপলের বিভিন্ন প্রিমিয়াম অ্যাপ্লিকেশন ও ডাইনামিক ডেক্সটপ ভিউ এক্সপ্রিয়েন্স এর জন্য বিখ্যাত। অ্যাপলের তৈরি ডিভাইসগুলোর সাথে এ অপারেটিং সিস্টেমটি বিনামূল্যে দেয়া থাকে।

এই অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত না হওয়ায় অন্য কোন কম্পিউটারে এটি ব্যবহার করা হয় না। তবে হ্যাকিংটোস এর মাধ্যমে সাধারণ কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়।

ফেডোরা (Fedora)

বিনামূল্যের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ওপেন সোর্স ডেভেলপমেন্ট ও কর্পোরেট ইউজের মত সুবিধা দেয়ার জন্য ফেডোরা বিখ্যাত। যা সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে বিনামূল্যের ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে রিলিজ করা হয়। 

ফেডোরা হচ্ছে লিন্যাক্সের তৈরি উবুন্টুর মতো আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম। এ সিস্টেমটিতেও উবুন্টুর ওপেন সোর্চ ফিচারটি যুক্ত করা যায়। তবে এক্ষেত্রে কিছু অর্থ ব্যয় করতে হয়। তবে যাই হোক না কেন, ফেডোরা যে কোন কম্পিউটার ও ল্যাপটপের জন্য একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি, ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম।

ওপেন সোর্স ডেভেলপার সফটওয়্যার হওয়ার একজন ডেভেলপারের প্রজেক্ট সম্পন্ন করার মত প্রায় সব ধরণের টুলস ও সুযোগ সুবিধা এখানে রয়েছে। তাই পার্সোনাল বা কর্পোরেট যে কোন লেভেলেই অপারেটিং সিস্টেমটি পারফেক্টলি কাজ করে।

সোলারিস (Solaris)

সোলারিস হলো ইউএনআইএক্স (UNIX) বেসড একটি অপারেটিং সিস্টেম যা সান মাইক্রোসিস্টেম ১৯৯০ এর মাঝামাঝি সময়ে ডেভেলপ করেছে। কিন্তু ২০১০ সালে এসে এর নাম পরিবর্তন করে ওরাকেল সোলারিস রাখা হয়।

সোলারিসকে বিশেষভালো তৈরি করা হয়েছে অনেক বড় আকারের ওয়ার্কলোড প্রসেসিং এবং মাল্টিপল ডাটাবেইজের কাজ সম্পন্ন করতে পারার জন্য।

ওপেন সোর্স হওয়ার এবং ডাটাবেজ ও বৃহৎ আকারের ওয়ার্কলোড নিতে পারায় এ অপারেটিং সিস্টেমটিকে কর্পোরেট লেভেলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

ফ্রি বিএসডি (Free BSD)

নেটওয়ার্কিং, ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্কিং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত অপারেটিং সিস্টেম হলো ফ্রি বিএসডি। যা ক্যালিফোর্নিয়া ইউভার্সিটি তাদের বৃহৎ ডেভেলপার কমিউনিটি ব্যবহার করে তৈরি করেছে।

ফ্রি বিএসডিও হচ্ছে সোলারিস এর মত ইউএনআইএক্স (UNIX) বেসড আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম। এ সফটওয়্যারটি বিভিন্ন পরিবেশে কাজ করতে সক্ষম। ফ্রি বিএসডি অপারেটিং সিস্টেমটির স্মার্ট ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে স্পিড ও স্হায়িত্ব। 

ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম (Chrome OS) 

ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম (Chrome OS)

টেক জায়ান্ট গুগলের তৈরি জনপ্রিয় এ সফটওয়্যারটি আসলে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন অপারেটিং সিস্টেম। যা লিন্যাক্স কার্নালের উপর ভিত্তি করে গুগোল ডিজাইন করেছে।

বর্তমানের সবথেকে জনপ্রিয় ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন  অপারেটিং সিস্টেম এটি। ম্যাক ওএস ছাড়া অন্যান্য প্রায় সিস্টেমেই এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সেন্টওএস (CentOS)

কোডিং, পারসোনাল এবং বিজনেস ইউজের জন্য বিন্যামূল্যের একটি অপারেটিং সিস্টেম হলো সেন্টওএস। এটিও একটি লিন্যাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম যা সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে রিলিজ করা হয়।

বিশেষ করে যারা কোডিং ও প্রোগ্রামিং রিলেটেড টাস্ক গুলো খুব সহজে ও দ্রুত সম্পন্ন করতে চান তাদের জন্যই এ অপারেটিং সিস্টেমটি। 

ডেবিয়ান (Debian) 

সহজে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন রান করার ক্ষেত্রে ডেবিয়ান অপারেটিং সিস্টেমটি অনেক কাজের। এ সিস্টেমটি তৈরি করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে লিন্যাক্স কার্নেল। ওপেন সোর্স ও বিনামূল্যের সফটওয়্যার হিসেবে অনেকেই এ ওএস টি ব্যবহার করছেন।

এ অপারেটিং সিস্টেমটির সবথেকে বড় সুবিধা হলো এর বিল্ট-ইন অ্যাপ্লিকেশন। এ সিস্টেমটির মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজারেরও বেশি প্রি-ইন্সটল অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ হিসেবে থাকে। যেগুলো ইউজার ফ্রেন্ডলি হয় এবং খুব সহজেই ইন্সটল করে ব্যবহার করা যায়।

কীবোর্ড এর কাজ কি? কিবোর্ড কত প্রকার ও কি কি?

অ্যান্ড্রয়েড (Android) 

বর্তমান বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় ওপেন সোর্স ডেভেলপার স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম হলো অ্যান্ড্রোয়েড। যা এখন অনেকে কম্পিউটারেও ব্যবহার করছেন।

এ অপারেটিং সিস্টেমটি তৈরিতে মডিফাইড লিন্যাক্স-কার্নেল ব্যবহার করা হয়েছে। ওপেন হার্ট এলিয়েনস কমিউনিটির তৈরিকৃত এ সফটওয়্যারটি সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে গুগলের কর্মাশিয়াল স্পন্সরশীপের মাধ্যমে রিলিজ পায়। 

অ্যান্ডোয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি বের হওয়ার ১ বছরের মধ্যেই ২০০৮ সালে সর্বপ্রথম অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোন যাত্রা শুরু করে। যা এখনকার সময়ের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম।

Leave a Reply