টেলিগ্রাম কিভাবে তৈরি হলো?

বর্তমান বিশ্বে বিপ্লব সৃষ্টিকারি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সফটওয়্যার হলো টেলিগ্রাম, যা মূলত একটি অ্যাপস। টেলিগ্রাম হচ্ছে একটি ফ্রিওয়্যার, ক্রস-প্ল্যাটফর্ম এবং cloud-based ইন্সট্যান্ট মেসেজিং সফটওয়্যার।  তাই অন্যান্য যে কোন বিশ্বমানের অ্যাপ এর সাথে তুলনা করলে টেলিগ্রাম অন্যদের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ কারণ এখানে প্রতিটি ম্যাসেজই এনক্রিপটেড পদ্ধতিতে গোপনে পাঠানো হয়ে থাকে। তাই আপনার ভিডিও, মেসেজ, অডিও ইত্যাদি যে কোন বার্তা থাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ।

বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ গুলোর মধ্যে টেলিগ্রাম দ্রুত অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে। সারাবিশ্বে বর্তমানে 50 কোটিরও বেশি টেলিগ্রামের সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। মূলত ভিডিও এবং অডিও বার্তাগুলো খুব সহজে আদান-প্রদান করার জন্য টেলিগ্রাম বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়।

টেলিগ্রাম কিভাবে তৈরি হলো? 

আজকের দিনের তুমুল জনপ্রিয় এ অ্যাপসটির যাত্রা শুরু হয় 2013 সালের 14 আগস্ট।  যা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিল রাশিয়ান দুই ভাই পাভেল জুরোফ এবং নিকোলাই জুরোফ। মূলত হোয়াটসঅ্যাপের সাথে টেক্কা দিতেই তখন এই অ্যাপসটি তৈরি করা হয়।

রাশিয়ান এই দুই ভাই সর্বপ্রথম একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল যার নাম ছিল VK।  কিন্তু রাশিয়ান সরকারের চাপে তারা রাশিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর জার্মানিতে আসার পর তারা সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে টেলিগ্রাম অ্যাপটি তৈরি করে। তবে টেলিগ্রাম অ্যাপ তৈরির পেছনে তাদের কোনো ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্য ছিল না। শুরু থেকে টেলিগ্রাম ছিল নন-প্রফিট অর্গানিজেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি অ্যাপস। 

বর্তমানে টেলিগ্রাম অ্যাপস টি সারাবিশ্বে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাদের মূল কার্যক্রম পরিচালনা সেন্টারটি দুবাইতে অবস্থিত। তবে এর ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজকর্ম লন্ডন থেকে করা হয়। এ অ্যাপটি ইংলিশ এবং আমেরিকান দুই স্বীকৃত মাধ্যমেই রেজিস্টার করা হয়েছে। এই অ্যাপটি বর্তমানে বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। তাই মাত্র সাত বছরের মাথায় টেলিগ্রাম অন্যদের থেকে অনেক অ্যাপ কে ছাড়িয়ে গেছে।

টেলিগ্রাম কোন কাজে ব্যবহৃত হয়?

টেলিগ্রাম মূলত একটি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ। আর সব ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ গুলোই রানিং টাইমে মেসেজ সরবরাহের কাজ করে থাকে। ব্যবহারকারীর উপর ভিত্তি করে এই মেসেজগুলো অডিও, ভিডিও বা টেক্সট ইত্যাদি যে কোন ফাইলে হতে পারে। তবে শুধু বন্ধুবান্ধবের সাথে মেসেজের মাধ্যমে চ্যাট করাই নয়, অন্যান্য অনেক কাজেই বর্তমানে টেলিগ্রাম কে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে টেলিগ্রাম সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মূলত এর গ্রুপ চ্যাটিং ব্যবস্থার কারণে। এখন টেলিগ্রামে এমন অনেক ধরনের গ্রুপ খোলা হয়েছে যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসকল গ্রুপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভিডিও শেয়ারিং, অনলাইন আর্নিং, আউটসোর্সিং ইত্যাদি।

ফেসবুকের অজানা কিছু সেটিং

টেলিগ্রাম ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা

টেলিগ্রাম ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা

অন্যান্য যে কোনো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন গুলোর চেয়ে টেলিগ্রামে বর্তমানে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর শুরুটা এরকম ভাল ছিলনা। শুরুতে টেলিগ্রামের বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা ছিল যার কারণে অনেক ব্যবহারকারীই এতে জয়েন করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করতেন। বিশেষ করে এর মাধ্যমে গ্রুপ কলিং কিংবা ভিডিও কলিং এর কোন সুবিধা ছিল না। এমনকি অডিও মেসেজ সেন্ড করারও কোন উপায় ছিল না।

তবে টেলিগ্রাম সেই প্রতিকূলতাকে জয় করেছে। বর্তমানে টেলিগ্রামে ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট সবগুলো মাধ্যমে মেসেজ আদান-প্রদান করা যায়। এমনকি এর মাধ্যমে ১ জিবি বা তার চেয়ে অনেক বড় বড় ফাইল বা ডাটা শেয়ার ও ট্রান্সফার করা সম্ভব। তাই এখনকার টেলিগ্রাম আগের থেকে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ও আপডেটেড। যা অন্যান্য যে কোন ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম।

টেলিগ্রাম নিরাপদ কি না?

টেলিগ্রামের নাম প্রথমে শুনে অনেকেই প্রশ্ন করেন, যে অ্যাপটি আসলে অন্যান্য ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপগুলোর মত নিরাপদ কিনা? উত্তরটা হলো, নিঃসন্দেহে অন্যান্য যে কোন ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন গুলো হচ্ছে টেলিগ্রাম অনেক অনেক বেশি নিরাপদ। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে নিরাপত্তার কথা বলতে গেলে একটি কথা না বললেই নয় যে, ফেসবুক মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ গুলোর চেয়ে টেলিগ্রামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো এবং বিশ্বস্ত।

আপনারা বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপের একটি বিতর্কিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা শুনে থাকবেন। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ আপনার মেসেজগুলোকে বিভিন্ন কাজের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে শেয়ার করতে পারবে, যা অবশ্যই আপনার নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার ফেসবুক বা মেসেঞ্জার এর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেশ কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। এ কারণে হ্যাকাররা খুব সহজেই ফেসবুক মেসেঞ্জার একাউন্ট হ্যাক করে আপনার তথ্য নিয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রেও হোয়াটসঅ্যাপ কিছুটা নিরাপদ থাকলেও বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন বির্তকিত নীতির কারণে হোয়াটসঅ্যাপও একই পথেই হাঁটছে।

তাই যদি নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করেন তাহলে বর্তমানে টেলিগ্রাম সবচেয়ে নিরাপদ যোগাযোগ অ্যাপ গুলোর একটি। টেলিগ্রামে আপনার পাঠানো প্রতিটি মেসেজকে বিশেষ পদ্ধতিতে এনক্রিপটেড করা হয়ে থাকে। যার ফলে তেমন কারোরই সাধ্য থাকে না আপনার মেসেজটি থেকে তথ্য উদ্ধারের। এমনকি খোদ টেলিগ্রাম কতৃপক্ষও চাইলে আপনার মেসেজটি দেখতে পারবেনা। এজন্যই টেলিগ্রাম অন্যান্য যে কারো চাইতে এত বেশি নিরাপদ।

টেলিগ্রাম কত জনপ্রিয়?

টেলিগ্রাম কত জনপ্রিয়?

টেলিগ্রাম বর্তমান বিশ্বের স্বীকৃত জনপ্রিয় শীর্ষ একটি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপস। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা এই অ্যাপসটি  ২০১৫ সালে ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৫০ লক্ষ। যা ২০২০ সালে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটিতে। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে টেলিগ্রাম অ্যাপসটির ব্যবহারকারী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। এত দ্রুত এত পরিমাণ ব্যবহারকারীর জন্য টেলিগ্রাম সারা বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

হোয়াটসঅ্যাপের সাথে টেক্কা দেওয়ার জন্য যে টেলিগ্রামকে তৈরি করা হয়েছিল তা সফলভাবেই হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার সহ অন্যান্য ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ কে টেক্কা দিতে পেরেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার অ্যাপগুলোর একটি বিশাল সমস্যা হলো যে কোনো বড় ভিডিও বা অডিও ফাইল পাঠাতে সক্ষম নয় এবং ফাইলের সাইন্স কি মিনিমাইজ করা হয় যার ফলে ব্যবহারকারীরা ভোগান্তিতে পড়েন কিন্তু টেলিগ্রামে সমস্যাটিকে খুব ভালোভাবে সমাধান করেছে। বর্তমানে আপনি ১  জিবি পর্যন্ত বা তারও বড় সাইজের যে কোনো ফাইল খুব সহজেই টেলিকম এর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারবেন।

প্রথমদিকে টেলিগ্রাম অ্যাপটিতে ভিডিও অডিও কল সুবিধা না থাকলেও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ভিডিও এবং অডিও কল সুবিধা যুক্ত হয়েছে। যা ব্যবহারকারীকে অ্যাপটিতে নিয়ে আসা ও জনপ্রিয়তা অর্জনে কাজে দিয়েছে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে এখন আপনি খুব সহজেই গ্রুপ ভয়েস কল, ভিডিও চ্যাট, লাইভ লোকেশন শেয়ারিং, সোশ্যাল প্লাগইন, পোল ক্রিয়েট ইত্যাদির জনপ্রিয় সুবিধাগুলো পাবেন।

তাই বিশেষ ভাবে বলতে গেলে ভিডিও শেয়ারিং ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং এবং অন্যান্য জনপ্রিয় সেবাগুলো বিনামূল্যে প্রদান এর কারণে টেলিগ্রাম বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ।  দ্রুততম সময়ে এর ৫০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী তারই প্রমাণ দেয়।  তাই নিরাপদে মেসেজিং কিংবা ভিডিও বা অডিও বার্তা আদান প্রদানে টেলিগ্রাম সামনের দিনগুলোতে আরও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। সব থেকে বড় কথা হল টেলিগ্রাম সম্পূর্ণ ফ্রি এবং সামনের দিনগুলোতেও এটি ফ্রি থাকবে তাই আজীবন ফ্রি সুবিধা গুলো উপভোগ করার জন্য অন্যান্য যে কোনো অ্যাপসের চেয়ে টেলিগ্রাম শীর্ষে থাকবে।

পিন্টারেস্ট কি? পিন্টারেস্ট কত বড়? পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস

সবশেষে একটি কথা না বললেই নয়, প্রয়োজনীয়তা থেকেই মূলত আবিষ্কার এর সূচনা হয়। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিসের দুনিয়ায় টেলিগ্রামের মত এমন একটি অ্যাপ্লিকেশনের দরকার ছিল। যার সোর্স হবে উন্মুক্ত, অনায়াসে শেয়ার করা যাবে বিশাল ফাইল, ব্যবহার করা যাবে বিনামূল্যে এবং ব্যবহারকারীরা থাকবেন নিরাপদ। আর টেলিগ্রাম এ সবগুলো চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাকে জয় করেছে। একই সাথে জয় করে নিয়েছে এর সাথে যুক্ত থাকা কোটি ব্যবহারকারীর হৃদয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *