এডোবি ফটোশপ কি?
এডোবি ফটোশপ হচ্ছে মূলত একটি ফটো বা ছবির গ্রাফিক্স সম্পাদনকারী আধুনিক সফটওয়্যার। সাধারণভাবে সফটওয়্যারটিকে শুধুমাত্র ফটোশপ নামেই ডাকা হয়ে থাকে। সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে এডোবি সিস্টেমস। অ্যাডোবির যতগুলো সফটওয়্যার আছে তার মধ্যে ফটোশপ সবচেয়ে জনপ্রিয়। বর্তমানে এ সফটওয়্যারটির ম্যাক ওএস এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে।
এডোবি ফটোশপ সফটওয়্যারটির মূল আবিষ্কারক হলেন থমাস নল ও জন নল নামের দুই ভাই। যা ১৯৮৭ সালে এডোবি সিস্টেমেস তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে বাজারজাত করে। শুরুতে শুধুমাত্র ফটোশপ নামে পরিচিত হলেও পরবর্তীতে এর নাম কোম্পানির নামানুসারে এডোবি ফটোশপ রাখা হয়।
ফটোশপ মূলত একটি রাস্টার ইমেজ সম্পাদনকারী সফটওয়্যার। ছবি বা ইমেজ সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে (১) রাস্টার (২) ভেক্টর। যে সকল ছবি পিক্সেল এককে তৈরি করা হয় এদেরকে রাস্টায় ইমেজ বলা হয়। কোন একটি রাস্টার ইমেজে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পিক্সেল থাকে যা কয়েক মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে।
প্রথমদিকে এডোবি ফটোশপের সাহায্যে শুধুমাত্র ছাপার ছবি সম্পাদনার কাজ করা যায় এমন ফিচারগুলো যুক্ত ছিল। তবে ইন্টারনেটের বিস্তার লাভের সাথে সাথে বর্তমানে ফটোশপ ইন্টারনেটে ছবি সম্পাদন করার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এডোবি ফটোশপ শুধু শুধুই এডোবি সিস্টেমসের সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। তার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। ফটোশপের সাথে অন্যান্য এডোবি সফটওয়্যার গুলোর শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যই ফটোশপে সাধারণ যে কোন ফরমেট কোন ধরনের অসুবিধা ছাড়াই এডোবির অন্যান্য সফটওয়্যার যেমন- এডোবি ইলাস্ট্রেটর, এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, এডোবি আফটার ইফেক্ট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায়।
তবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ফটোশপকে যুক্ত করার জন্য বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ফটোশপ 2.5 কে সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে যুক্ত করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়। এ পর্যন্ত ফটোশপের ২১ টি সংস্করণ বের হয়েছে, এর সর্বশেষ সংস্করণ টির নাম হলো ফটোশপ ২০২০।
গ্রাফিক্স ডিজাইনার রেজাউল করিমের সফলতার গল্প
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে মূলত আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ ফটোশপ এর যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে রিলিজ হওয়া ফটোশপ সিএস ৬.০ এর মাধ্যমে। এ ভার্সনটি থেকেই সম্পূর্ণ নতুন একটি ইন্টারফেস ব্যবহার করা শুরু হয় যার মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছেমতো কালার এডজাস্ট করতে পারেন। এছাড়াও auto saving, patch tool, move tool, blur gallery, vector shape with dash and dottet stock ফিচার গুলোকে নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিও ও এনিমেশন তৈরি করার কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে আধুনিক ভার্সনগুলি। তবে জেনে রাখা ভালো যে ফটোশপ পরিবারের সাতটি আলাদা আলাদা সফটওয়্যার রয়েছে। এগুলো হলোঃ
- ফটোশপ সিএস ৫
- ফটোশপ সিএস ৫ এক্সটেন্ডেড
- ফটোশপ এলিমেন্টস ৬.০ ম্যাকিনটোশের জন্য
- ফটোশপ এলিমেন্টস ৬.০ উইনডোজের জন্য
- ফটোশপ এলিমেন্টস ৬.০ এবং অ্যাডোবি প্রিমিয়ার এলিমেন্টস ৪.০
- ফটোশপ এক্সপ্রেস বিটা
- ফটোশপ লাইটরুম ২
- ফটোশপ সিএস সিক্স
- ফটোশপ সিসি বা ক্রিয়েটিভ ক্লাউড (এর বিভিন্ন ভার্সন রয়েছে)
এই সফটওয়্যার গুলো প্রতিটির মধ্যেই কোনো না কোনো বিশেষত্ব আছে। যার ফলে এগুলোকে বিশেষ কিছু কাজের জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ ফটোশপ ব্যবহার করে থাকে।
এডোবি ইলাস্ট্রেটর কি?
এডোবি ইলাস্ট্রেটর হলো একটি ভেক্টর ভিত্তিক গ্রাফিক্স ডিজাইন ও সম্পাদনকারী সফটওয়্যার। বেশিরভাগ মানুষের কাছে ইলাস্ট্রেটর নামে পরিচিত এ সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে এডোবি সিস্টেমস। অ্যাডোবির জনপ্রিয় সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে ইলাস্ট্রেটর অন্যতম। এ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে আপনি প্রায় সব ধরনের ভেক্টর ইমেজ নিয়েই কাজ করতে পারবেন। এডোবি ইলাস্ট্রেটরের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য একে 2018 সালের সেরা গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পাদনকারী সফটওয়্যার হিসেবে নির্বাচিত করেছে PC MAGAZINE
এডোবি ইলাস্ট্রেটর যেহেতু ভেক্টর গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করে তাই আপনার মনে ভেক্টর ইমেজ বা ছবি সম্পর্কে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। তবে আপনাদের কে জানিয়ে রাখি যে ইমেজ সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে যথা- (১) রাস্টার (২) ভেক্টর। এর মধ্যে ফটোশপ কাজ করে রাস্টার ইমেজ নিয়ে এবং ইলাস্ট্রেটর কাজ করে ভেক্টর ইমেজ নিয়ে। রাস্টার ইমেজ নিয়ে কাজ করার সময় ছবিটাকে একটু বড় করতে চাইলেই তা ফেটে যায়। তাই ছবিটির সাইজ কি হবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করে নিতে হয়। কিন্তু ভেক্টর ইমেজ এর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয় না। ভেক্টর ইমেজ পিক্সেল একেক তৈরি না হওয়ার কারণে একে ইচ্ছেমতো বড় ছোট করা যায়। একই সাথে ছবির মানের উপর এর কোন প্রভাব পড়ে না। ফলে ভেক্টর ইমেজ তৈরি করার সময় এর সাইজ নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা বা ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
মজার ব্যাপার হলো টুলের ব্যবহারের দিক থেকে এডোবি ফটোশপ ও এডোবি ইলাস্ট্রেটর এর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। কিন্তু ফটোশপ রাস্টার গ্রাফিক্স এবং ইলাস্ট্রেটর ভেক্টর গ্রাফিক্স সম্পাদন করতে পারার জন্য উভয়ই আলাদা আলাদা স্বকীয়তা অর্জন করেছে।
এডোবি ইলাস্ট্রেটরের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো ভেক্টর বেসড ডিজাইন তৈরি করতে পারা। এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ব্যানার ও পোস্টার ডিজাইন এবং বই-পুস্তকের কভার ডিজাইন সহ আরও অনেক কিছু করা যায়। এটিকে যে কোন ধরনের অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ডিজাইনের কাজে যেমন- কার্টুন বা এনিমেশনের বিভিন্ন অবজেক্ট ও ক্যারেক্টর ডিজাইনের কাজে ব্যবহৃত করা যায়। আবার এর মাধ্যমে তৈরি করা যায় বিভিন্ন ধরনের আইকন। বিশ্বের অসাধারণ সব আইকনের অধিকাংশই কিন্তু এডোবি ইলাস্ট্রেটর দিয়ে তৈরি।
বর্তমানে আমরা ম্যাক ও উইন্ডোজ উভয় অপারেটিং সিস্টেমে ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করতে পারলেও প্রথমদিকে তা সম্ভব ছিল না। সর্বপ্রথম ১৯৮৭ সালে ইলাস্ট্রেটর তৈরি করা হয় মূলত ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে। এরপর ১৯৮৯ সালে একে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। এডোবি ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যার এর সর্বশেষ সংস্করণ ইলাস্ট্রেটর ২০২০ যা ২০২০ সালের আগস্ট মাসে রিলিজ করা হয়েছে। সর্বাধুনিক সফটওয়্যার হিসেবে এটি ব্যবহারকারীদের অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেবে বলে এডোবি সিস্টেমস আশাবাদী।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য কি কি সফটওয়্যার প্রয়োজন?
ডিজিটাল বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টর পুরোপুরিভাবে সফটওয়্যার নির্ভর সিস্টেম। বর্তমান সময়ে সফটওয়্যার ছাড়া এ সেক্টরে ভালো কিছু করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখার জন্য সফটওয়্যার এর বিকল্প কোনো কিছুই হতে পারে না।
গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে সাফল্য অর্জনের জন্য আমাদের সফটওয়্যারগুলোকে সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ বর্তমান যুগ ডিজিটাল ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই আধুনিকতার ব্যবহার না করলে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগীদের থেকে শতগুণে পিছিয়ে পড়বো।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও বিখ্যাত কিছু সফটওয়্যার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- Adobe Photoshop, Adobe Illustrator, Microsoft PowerPoint, Adobe Indesign, Canva, Designer, AutoCade, Blender ইত্যাদি।
এ সফটওয়্যার গুলোর প্রতিটির এক একটি বিশেষত্ব রয়েছে। তাই প্রতিটি সফটওয়্যারগুলোর কাজের দিক থেকে ভিন্নতা দেখা যায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য আপনি Microsoft PowerPoint, Adobe Photoshop, Adobe Illustrator, Canva এই সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করতে পারেন। এরপর পরবর্তীতে Blender, AutoCAD, Maya এর মত এডভান্সড সফটওয়্যার গুলো নিয়ে কাজ করতে পারেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন এমন একটি সেক্টর যেখানে প্রতিনিয়তই আপনাকে কিছু না কিছু শিখতে হবে। তাই এ সেক্টরে প্রবেশ করার জন্য শুরু থেকেই আপনাকে প্রচুর পরিমানের কাজ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে আপনি খুব দ্রুত গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করে ভালো কিছু অর্জন করতে পারবেন।