টুইটার কি? টুইটার কতো বড়? টুইটার কীভাবে তৈরি হলো?

প্রতিদিন আমরা গড়ে ১৪৪ মিনিট সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করি। প্রতিদিনের বিভিন্ন আপডেট সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে না পারলে আমাদের দিন যায় না। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আপডেট থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, ড্রেস কেনা সহ প্রতিটা মুহূর্ত আমরা বন্ধুদের জানাতে ভালবাসি।

 নিত্য নতুন তথ্য, সংবাদ, ট্রেন্ড সবকিছুই এখন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। কোন পণ্য বা কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এর বিকল্প আর কিছুই নেই। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা কথা বলবো একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে। আজকের পোস্টে টুইটার কি? টুইটার কীভাবে তৈরি হয়েছে? টুইটার কতো বড়? টুইটারের ফিচার সমূহ এবং কীভাবে টুইটার ইউজ করবো? সে সম্পর্কে জানবো। তো চলুন শুরু করা যাক।

টুইটার কি? 

টুইটার একটি অতি জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট। অর্থাৎ এখানে আপনি ছোট আকারের মেসেজ পোস্ট করতে পারবেন। এর এতো জনপ্রিয়তার পেছনে ছোট আকারের পোস্ট অনেকাংশেই দায়ী। কারন টুইটারের মূল ইউজারবেস হল ফেমাস ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি। তারা সারাক্ষণ কোন না কোন কাজে বিজি থাকে। সময় নিয়ে কারো লম্বা লম্বা পোস্ট পড়ার সময় হয়না। তাই তারা টুইটার বেশি পছন্দ করে।

মোটকথা টুইটার একটি নিউজ এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, যেখানে ১৪০ থেকে ২৮০ টি শব্দের মধ্যে বিশ্বের ৩৪ টি ভাষায় টুইট বা পোস্ট করা যায়। টেক্সট বাদেও ছবি, ভিডিও, লিংক, জিফ এবং স্টিকার পোস্ট করা যায়। টুইটার ভাইন নামক ভিডিও শেয়ারিং সার্ভিস কিনে নেওয়ার পর ভিডিও পোস্ট করা আরও সহজ হয়েছে। টুইটারের মোট সক্রিয় ব্যবহারকারী সর্বশেষ ২০১৯ সালের তথ্য মতে ৩১১ মিলিয়ন। এটি একটি পাবলিক কোম্পানি যার বর্তমান কর্মী ২০১৯ তথ্য মতে ৪,৬০০ জন।

টুইটার কীভাবে তৈরি হলো? 

টুইটার প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালের ২১ মার্চ। বর্তমানে টুইটারের বয়স ১৪ বছরের একটু বেশি। টুইটার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যেই অনেক পপুলারিটি পায়। টুইটারের সদর দপ্তর সান ফ্রান্সিসকো ক্যালিফোর্নিয়া এবং এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসে, নোয়া গ্লাস, বিয স্টোন এবং ইভান উইলিয়ামস। বর্তমান প্রধান নির্বাহী বা CEO হলেন জ্যাক ডোরসে। তিনি ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত টুইটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন।

Odeo কোম্পানির একটি পডকাস্ট থেকে টুইটার প্রজেক্টের উৎপত্তি হয়। জ্যাক ডোরসে সেই সময় নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলেন। তিনি প্রথম তার বন্ধুদের কাছে এসএমএস সার্ভিস নিয়ে একটি আইডিয়া তুলে ধরেন এবং এই প্রজেক্টকে তারা Twttr নাম দেন।

প্রোজেক্ট পাবলিশ করার পর টুইটার ডট কম ডোমেইন কিনে নেন এবং Twttr থেকে তাদের সার্ভিসের নাম টুইটার এ বদলে ফেলেন। Twitter নাম নির্বাচন করার পিছনে অবশ্য একটা কারন আছে। Twitter শব্দটি ভেঙে বড় করলে “Typing What I’m Thinking That Everyone’s Reading” বা “আমি যা ভাবছি তা টাইপ করা যা সবাই পড়ছে“ এই লাইন তৈরি হয়। জ্যাক ডোরসে টুইটারের ডেফিনেশন দিতে “chirps from birds” এই শব্দ ইউজ করেন।

টুইটার কত বড়?

টুইটার কত বড়?

টুইটার একটি পাবলিক কোম্পানি যা পরিচালিত হয় শেয়ার হোল্ডার দ্বারা। ২০১৯ সালে শেয়ার বাজারে লসের পরেও তাদের রেভিনিউ ৩.৪৬ বিলিয়ন ইউএস মার্কিন ডলার। তাদের বর্তমান ইউজার সংখ্যা ৩৩০ মিলিয়নের থেকেও বেশি। তাদের সবথেকে বেশি ইউজার পর্যায়ক্রমে ইউএসএ, জাপান, ইউকে, ইন্ডিয়া থেকে আসে।

বিশ্বের সব প্রভাবশালী মানুষ টুইটার ইউজ করে। এদের মধ্যে সবথেকে বেশি ফলোয়ার পর্যায়ক্রমে বারাক ওবামা, জাস্টিন বিবার, রিহানা, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, অমিতাভ বচ্চন সহ আরও অনেকেই আছে। ওয়েব ট্রাফিকের দিক দিয়ে টুইটার সিমিলার ওয়েবের তথ্য মতে বর্তমানে ৪ নাম্বার পজিশনে আছে। টুইটার সবথেকে বেশি ইউজ হয় মোবাইল থেকে। গুগলের তথ্য মতে ৮০% টুইটার ইউজার মোবাইল থেকে টুইটার ভিজিট করে। মার্কেটিং করার জন্য ৬৬% ব্র্যান্ড টুইটার ইউজ করে। আমেরিকার মানুষ টুইটার থেকে আসা নিউজ গুলোকে ট্রাস্ট করে।

টুইটারের ফিচার সমূহ

টুইটার একটি রিয়েল টাইম মাইক্রো-ব্লগিং ওয়েবসাইট। এটি আপনি ডেক্সটপ বা মোবাইল উভয় প্লাটফর্মে ইউজ করতে পারবেন। এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফিচার নিজে বর্ণনা করা হলো:

হ্যাশ (#) ট্যাগ

সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে হ্যাশ ট্যাগ ইউজ করা হয় কোন টপিক ট্রেন্ডিং করাতে । অর্থাৎ আপনি হ্যাশ ট্যাগ ইউজ করে কোন বিষয় নিয়ে মতামত, সমর্থন অথবা প্রতিবাদ করতে পারবেন। এখন ধরুন আপনি দেশের একটি দুর্নীতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করতে চাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে হ্যাশ ট্যাগ ইউজ করে সে বিষয়ে পোস্ট করলে একটি ইনভিজিবল গ্রুপ তৈরি হবে। এর পর কেউ একই হ্যাশ ট্যাগ ইউজ করলে তার পোস্ট ওই গ্রুপে অ্যাড হয়ে যাবে।

এভাবে একটি বিষয়ের গুরুত্ব বুঝাতে এবং অ্যালগরিদম ইউজ করে টপিক নিয়ে আলোচনা করতে হ্যাশ ট্যাগ বেশি ব্যবহার করা হয়। এর কিছু উদাহরণ হিসেবে #MeToo, #CupforBen, #BlackLivesMatte এগুলোর কথা বলা যায়।  

ডিরেক্ট মেসেজ (DM)

টুইটারে আপনি চাইলে যে কোন ইউজারকে ডিরেক্ট মেসেজ দিতে পারবেন। এই ফিচার অনেকটাই ইন্সটাগ্রামের মত কাজ করে। তবে পরিসংখ্যান বলে টুইটারে ডাইরেক্ট মেসজের রিপ্লাই তেমন একটা পাওয়া যায় না।

টুইট(Tweet):

 শুরুর দিকে টুইটার তাদের পোস্ট করার ক্যারেক্টার লিমিট দিয়েছিল ১৪০টি, যেখানে আপনাকে ১৪০ টি লেটার ইউজ করে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন টুইটারের ইউজার বাড়তে থাকে তখন ২০১৭ সালের দিকে তারা কিছু কিছু দেশের জন্য ক্যারেক্টার লিমিট ডাবল করে দেয়। অর্থাৎ আপনি এশিয়া মহাদেশে থাকেন জন্য ২৪০ ক্যারেক্টারে টুইটারে পোস্ট করতে পারবেন, আর এই টুইটারে পোস্ট করাকেই টুইটারের ভাষায় টুইট বলে।

রিটুইট (Retweet)

রিটুইটকে আমরা শেয়ারের সাথে তুলনা করতে পারি। ফেসবুকে যেমন কোন পোস্ট পছন্দ হলে তা আমরা শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিতে পারি, ঠিক তেমনি রিটুইট করে অন্য কোন টুইট আমরা নিজের টুইটার প্রোফাইলে রেখে দিতে পারি। এভাবে একই সাথে আপনি এবং আপনাকে যারা ফলো করে তারা উক্ত টুইট দেখতে পাবে।

ফলোয়ার (Follower)

ফেসবুকে আমরা একজন আরেকজনের যেমন বন্ধু হই তেমনি টুইটারে তা ফলোয়ার হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ কেউ যদি আপনাকে বন্ধু বানাতে চায় বা আপনার টুইটগুলো নিয়মিত দেখতে চায় তাহলে আপনাকে ফলো করবে। যারা আপনাকে ফলো করবে তারাই আপনার ফলোয়ার হিসেবে গণ্য হবে।

ফলোইং (Following)

কোন প্রোফাইলের ফলো বাটুনে ক্লিক করলে আপনি তার ফলোয়ার লিস্টে অ্যাড হয়ে যাবেন। অর্থাৎ আপনি যদি কাউকে ফলো করেন তাহলে ফলোইং ট্যাবে সবার প্রোফাইল লিংক দেখতে পাবেন। এখানে শুধু প্রোফাইল লিংক বাদেও গ্রুপ বা পেজ যা আপনি অনুসরণ করেন তা সব দেখাবে।

কীভাবে টুইটার ইউজ করবো?

কীভাবে টুইটার ইউজ করবো?

টুইটার ইউজ করার জন্য আপনার তেমন বিশেষ কোন পদক্ষেপ নিতে হবে না। সাধারনত আপনি যেভাবে ফেসবুক অ্যাপ ইউজ করেন সে ভাবেই টুইটার ইউজ করতে পারবেন। টুইটার ব্যবহার করার জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আপনি টুইটার মোবাইল ব্রাউজার, মোবাইল অ্যাপ, টুইটার লাইট, ডেক্সটপ ব্রাউজার এবং মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন।

পিন্টারেস্ট কি? পিন্টারেস্ট কত বড়? পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস

টুইটার একটি অতিপরিচিত সোশ্যাল মিডিয়া। বিশ্বের সকল প্রভাবশালী মানুষ টুইটার ইউজ করে তাদের জীবন যাপন এবং কাজকর্ম শেয়ার করে। ইউরোপের দেশ সহ আমেরিকায় টুইটার অনেক জনপ্রিয়। এছারাও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও টুইটার অনেক জনপ্রিয় একটি মাইক্রো-ব্লগিং ওয়েব সাইট। আমাদের আজকের লেখা পড়ে আশা করি টুইটার সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেন। টুইটার বা অন্য কোন বিষয়ে মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।

Leave a Reply