পুরোনো ফোন কেনার আগে ১০ টি বিষয় জানা জরুরি
মোবাইল ফোন

পুরোনো ফোন কেনার আগে ১০ টি বিষয় জানা জরুরি

মোবাইল ফোন আমাদের আধুনিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। প্রতি মুহূর্তেই আমাদের পাশে থেকে বন্ধুর মতো বিভিন্ন কাজকর্মে, যোগাযোগ ও শিক্ষায় অনবরত সাহায্য করে যাচ্ছে এ আধুনিক ডিভাইসটি। এ জন্য বর্তমান আধুনিক জীবনে মোবাইল ফোনের বিকল্প কোনো কিছুই হতে পারে না। আর বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন ছাড়া একটি দিন কাটানো অনেক কঠিন ব্যাপার।

আধুনিক বিজ্ঞানের অনান্য এক আবিষ্কার মোবাইল ফোন নামক ডিভাইসটি। সময়ের পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন এর ফলে মোবাইল ফোন এখনকার যে কোন ডিভাইসকেই টেক্কা দেওয়ার সামর্থ্য রাখছে। এ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই আমরা মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের সাথে অডিও, ভিডিও কিংবা মেসেজের মাধ্যমে  যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি। যা পূর্বে কখনো কল্পনাও করা যেত না। এমন অভূতপূর্ব আবিষ্কারটি আমাদের জীবনযাত্রাকেই পুরোপুরি ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন হাজার মাইল দূরও আর কোন দূরত্ব নয়। আপনার হাতের এক ইশারায় পৃথিবীর যে কোনো স্থানে পৌঁছে দিতে পারবেন আপনার বার্তা।

বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনেরই মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। মান এবং সুবিধার উপর ভিত্তি করে এর দামেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এখন মোবাইল ফোন আগেকার মতো শুধু কথা বলার কোন যন্ত্র নয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এখন ভিডিও দেখা, গান শোনা, ছবি তোলা, অডিও রেকর্ড করা, ইন্টারনেট ব্যবহার, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার, গেমস খেলা সহ আরো অনেক কাজেই একে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই মোবাইল ফোন গুলোতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সুবিধা। সাথে শতশত মোবাইল ফোন কোম্পানির প্রতিযোগিতায় আপনি একটু হলেও চিন্তিত হয়ে যাবেন এটা ভেবে যে আসলে কোন ফোনটি আপনার জন্য।

কীভাবে স্লো কম্পিউটার ফাস্ট করা যায়?

বর্তমানে বাজারে থাকা high-performance ফোনগুলোর দাম সাধারণত ১৫/২০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এ ফোনগুলোতে থাকা বিশেষ ফিচার গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শক্তিশালী র‍্যাম, আকর্ষণীয় ডিজাইন, বড় হাই রেজ্যুলেশন ডিসপ্লে, নচযুক্ত ক্যামেরা, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেস আনলক সুবিধা, বিভিন্ন ধরনের সেন্সর( প্রক্সিমিটি সেনসর, g-sensor, ম্যাগনেটিক সেন্সর) ইত্যাদি। এসকল আকর্ষণীয় সুবিধাগুলো এখনকার মোবাইল ফোন নামক ডিভাইসটিকে একটি মিনি কম্পিউটারে পরিণত করেছেন।

মোবাইল ফোন এখনকার নিত্যদিনের সঙ্গী ও লাইভ স্টাইল এর একটি অংশ হিসেবে পরিণত হওয়ায় সবাই চায় একটি ভাল মানের ফোন নিজের কাছে রাখতে। কিন্তু সবার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের ফোন কেনার মতো এতো বেশি বাজেট হয় না। তাই বাধ্য হয়ে তখন পুরাতন মোবাইল ফোন কেনার দিকে ঝুঁকতে হয়। এছাড়া কিছুটা কম দামে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও বেশি দামের ফোন গুলো পাওয়া যায় বলে অনেকেই পুরাতন ফোন কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

তবে কয়েকটি বিষয়ের উপরে খেয়াল না রেখে পুরাতন মোবাইল ফোন কিনলে আপনার লাভের বদলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এ জন্য পুরাতন ফোন কেনার আগে এসব বিষয়গুলো ভালভাবে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এখানে এমন ১০ টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তবেই পুরাতন ফোন কেনা উচিৎ –

১. কমপক্ষে দুই জিবি র‍্যামের ফোন বাছাই করুনঃ আপনি যখন পুরাতন কোন ফোন কেনার কথা ভাবছেন তখন অবশ্যই এটাও ভেবে নিন যে কমপক্ষে 2 জিবি র‍্যামের ফোন কিনবেন। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপস, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সফটওয়্যার ইত্যাদির ব্যবহারের কারণে কম র‍্যামের ফোনগুলোতে প্রতিনিয়তই অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে র‌্যাম একটু বেশি হলে অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। তার সাথে ফোনের পারফরম্যান্স এবং গতির দিক থেকেও বেশ খানিকটা সুবিধা পাওয়া যায়। যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক সহজেই করা সম্ভব হয়।

২. ফোনের হার্ডওয়্যার ও বডি পরীক্ষা করুনঃ পুরাতন ফোন কেনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে জিনিসটির দিকে খেয়াল রাখতে হয় তাহলো এর হার্ডওয়্যার। ভালোভাবে খতিয়ে পরীক্ষা করে নিন এর বডিতে কোন প্রকার স্ক্রাচ বা দুর্ঘটনাজনিত কোন চিহ্ন আছে কিনা। যদি মেজর কোন ত্রুটি পান তাহলে সে ফোনটি কেনা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোনের পারফরম্যান্স কমে যাওয়ায় অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় অনেকে ফোন বিক্রি করে থাকে। তাই এ বিষয়টি থেকে সাবধান থাকবেন। নয়তো ফোন কেনার পর থেকে প্রতিনিয়ত এই অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন।

৩. ফোনের ব্যাটারি ও এর পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুনঃ ফোনের ব্যাটারি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তাই পুরাতন ফোন কেনার আগে অবশ্যই এর ব্যাটারি এর পারফরম্যান্স পরীক্ষা করে দেখা উচিত। বিশেষ করে যে ফোনগুলোতে ব্যাটারি রিমুভ করার মত সুবিধা আছে। অন্যথায় মানহীন ব্যাটারির কারণে আপনার ডিভাইসের পারফরম্যান্স এবং এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাই ডিভাইসে থাকে ব্যাটারিটি আসল কিনা তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। এর সাথে সাথে বিক্রেতা আপনাকে অরিজিনাল চার্জার প্রোভাইড করছে কিনা তা জেনে নিন। আপনাকে ফোনের অরিজিনাল চার্জার দেয়া না হলে আপনি বিক্রি তার সাথে কথা বলে ফোনটির দাম আরো কমানোর জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

৪. আইএমইআই নাম্বার পরীক্ষা করে নিনঃ যে কোন পুরাতন ফোন কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে ফোনের আইএমইআই নাম্বারটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আইএমইআই হলো ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি- যা কোন মোবাইলের মূল পরিচয় বহন করে। এই আইএমইআই নাম্বারটি ব্যবহার করেই ফোনটি ক্লোন, রিকন্ডিশন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে নিয়ে আসা কিনা তা জানা যায়। এ আইএমইআই নাম্বারটি জানার জন্য *#০৬# নাম্বারে ডায়াল করতে পারেন। যার ফলে আপনার ফোনটিকে স্ক্রিনে 15 ডিজিটের একটি সংখ্যা দেখা যাবে যা মূলত আপনার আইএমইআই নাম্বার।

৫. ফোনের টাচস্ক্রীনটি পরীক্ষা করুনঃ টাচস্ক্রিন ফোন কেনার সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এর টাচপ্যাড ঠিকমত কাজ করেনা। তাই এর টাচস্ক্রীনটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা কিছুক্ষণ ধরে যাচাই করে নিন। টাচস্ক্রিন পরীক্ষা করার সময় ফাস্ট রেসপন্স করছে কিনা তা লক্ষ্য করুন। এছাড়া পুরো ডিসপ্লের টাচ প্যানেলটি কাজ করছে কিনা তা দেখে নিন। অনেক সময় ফোনে লিকুইড জাতীয় কিছু প্রবেশ করলে কিংবা টাচ প্যানেল এর সমস্যা থাকলে ফোনটি দেরিতে এবং ভুল রেসপন্স করে। এমন সমস্যা দেখা দিলে সতর্ক হোন।

৬. ক্লোন ও রিকন্ডিশন্ড ফোন কিনছেন কি-না খেয়াল করুনঃ দামি ফোন গুলোর ক্ষেত্রে হরহামেশাই ক্লোন ও রিকন্ডিশন্ড এর মতো সমস্যা দেখা যায়। বিষেশ করে নামি-দামি মোবাইল ব্যান্ড যেমন- অ্যাপল, স্যামসাং এর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি অনেক বেশি। এমন অনকেই রয়েছে যাদের ক্লোন ও রিকন্ডিশন্ড সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে এমন ফোন কিনে প্রতারিত হয়েছেন। তাই ফোনের সাথে থাকা ডকুমেন্ট ও এর আইএমইআই নাম্বার যাচাই করে ফোনটি ক্লোন ও রিকন্ডিশন্ড কি-না তা দেখে নিন। প্রয়োজনে www.iphoneimei.infoIMEIdedective.com ওয়েবসাইটগুলোর সহায়তা নিতে পারেন।

পৃথিবীর ১০ টি দামী ফোন – দামি স্মার্টফোন

৭. ফোনের ক্যামেরা ঠিক আছে কি-না যাচাই করুনঃ এমন অনেক মডেলের ফোন রয়েছে যেগুলো কিছুদিন ব্যবহার করার পর ক্যামেরাতে ধুলোবালি ও অন্যান্য সুক্ষ জিনিস প্রবেশ করার কারণে এর ক্যামেরা পারফরম্যান্স অনেক খারাপ হয়ে যায়। এসব ধুলাবালি প্রবেশ করার কারণে ক্যামেরা ঘোলাটে দেখা যায় এবং ছবি অনেক খারাপ আসে। তাই ফোনের ক্যামেরা পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি।

৮. অনলাইন দাম যাচাই করুনঃ আপনি যে মডেলের ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন তার অনলাইন ফিচার ও দাম দেখে নিন। এরপর বিক্রেতার সাথে ফোনের দামের ব্যাপারে দরদাম করুন। অন্যথায় প্রতারিত হতে পারেন। আজকাল কোন ফোনের দাম দেখা অনেক সহজ। শুধু ফোনটির মডেল নাম্বার লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই এর দাম ও অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন।

৯. ওয়ারেন্টি ও ফোনের কাগজপত্র বুঝে নিনঃ ফোন কেনার আগে অবশ্যই বিক্রেতার কাছ থেকে সব ডকুমেন্ট বুঝে নিন। ফোনের যদি ওয়ারেন্টি থেকে থাকে তাহলে বুঝে নিন। অবশ্যই ওয়ারেন্টি কার্ডে থাকা ইএমইআই নাম্বারটি ফোনের ইএমইআই নাম্বারের সাথে মিলিয়ে নিন।

১০. ফোন কেনার আগে কিছুক্ষণ চালিয়ে নিনঃ মোবাইল ফোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস হওয়ার এর মধ্যে নানান ত্রুটি থাকতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি, কিছুক্ষণ বা কয়েকঘন্টা চালিয়ে নিতে পারেন। এতে করে ফোনটির পারফরম্যান্স ও আনুষাঙ্গিক ধারণাগুলো পেতে পারেন। 

Leave a Reply