‘রোবট’ আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এক অনন্য সৃষ্টি। চিকিৎসা ও গবেষণা সহ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে রোবটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফলস্বরূপ রোবটের অসীম তাৎপর্যের কারণে, এর গবেষণার জন্য প্রযুক্তির শাখা উন্মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার নাম ‘রোবটিক্স’ এবং যেখানে কেবল রোবটের ডিজাইনিং, মেকিং এবং প্রয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ ও গবেষণা করা হয়।
বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে রোবটের ব্যবহার এবং রোবট নিয়ে কাজ ও গবেষণা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। তাই এসব উন্নত দেশর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশেও রোবটের ব্যবহার ও এর চর্চার বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। তাই রোবট ও এর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য।
ঠিক সেই দিক বিবেচনা করে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে, রোবট কি এবং রোবট তৈরির উপাদান ও কৌশলসহ আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু নিয়ে। তাহলে আর দেরি না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
রোবট
রোবট শব্দটি চেক শব্দ ‘রোবোটা’ থেকে উৎপত্তি , যার অর্থ হলো ‘মানুষের দাসত্ব’ বা ‘দীর্ঘক্ষন বিরামহীন কাজ করতে পারে এমন যন্ত্র’। সাধারণত রোবট হলো একধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence-AI) সম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যা কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং যেটি মানুষের বিকল্প হিসেবে নানাবিধ জটিল কাজে ব্যবহৃত হয়।
অর্থাৎ রোবট হলো একপ্রকার বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ব্যবস্থা যেটি সম্পূর্ণ মানুষের মত চলাফেরা ও কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম। বরং যেহেতু রোবট একপ্রকার যন্ত্র তাই এটি যেকোন কাজ বিরতিহীনভাবে করতে পারে এবং বিভিন্ন জটিল কাজ যেগুলো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় সেগুলো মানুষের বিকল্প হিসেবে করতে পারে। যেমন- যুদ্ধের ময়দান, মহাকাশ গবেষণা কিংবা আগ্নেয়গিরির ভূগর্ভের মত দুর্গম স্থানসমূহে রোবট মানুষের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম অনায়াসে করতে পারে।
রোবট তৈরির উপাদান
রোবট একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যার নিজস্ব কোন বুদ্ধিমত্তা নেই। তাই একটি রোবটকে পরিচালিত করতে পূর্বে থেকে এর মেমোরিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে নির্দিষ্ট কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) সেট করে দেয়া হয়।
তাই একটি রোবট ঠিক ততটুকু কাজই করতে পারে যতটুকু কাজের নির্দেশিকা তার মেমোরিতে সেট করে দেয়া হয়। তবে একটি রোবটের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি যেমন ব্যয়বহুল তেমনি সময়সাপক্ষে ও কষ্টসাধ্য একটি কাজ। কিন্তু এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেই একটি রোবটের মূল উপাদান হিসেবে ধরা হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়াও রোবটের রয়েছে কিছু সাধারণ উপাদান যেগুলো একটি রোবট তৈরির পূর্ব শর্ত। রোবট তৈরির এই উপাদানগুলো নিম্নরূপ:
- মস্তিষ্ক বা প্রসেসর (Processor)
- ব্যাটারি বা পাওয়ার সিস্টেম (Battery or Power System)
- অ্যাকচুয়েটর (Actuator)
- সেন্সর (Sensor)
- ম্যানিপুলেশন (Manipulation)
মস্তিষ্ক বা প্রসেসর: একটি রোবট তৈরির মূল উপাদান হলো এর প্রসেসর। প্রসেসর হলো এমন একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা যেখানে একটি রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এর সমস্ত নির্দেশিকা কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর সাহায্যে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অর্থাৎ প্রসেসর হলো আমাদের মস্তিষ্কের মত, যেখানে সমস্ত বুদ্ধিমত্তা সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
ব্যাটারি বা পাওয়ার সিস্টেম: একটি রোবটকে সচল রাখার জন্য সর্বদা একে ইলেকট্রিক পাওয়ার প্রদান করে রাখতে হয়। যার জন্য প্রয়োজন একটি পাওয়ায় সিস্টেম বা ব্যাটারির। সাধারণত একটি রোবটকে পাওয়ার প্রদানের জন্য রিচার্জেবল লেড এসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়।
অ্যাকচুয়েটর: অ্যাকচুয়েটর হলো বৈদ্যুতিক মটরের সাহায্যে তৈরিকৃত একধরনের বিশেষ যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা রোবটের হাত-পা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ অ্যাকচুয়েটর হলো আমাদের হাত-পায়ের পেশির মত যা আমাদের নড়াচড়ায় সহায়তা করে।
সেন্সর: সেন্সর রোবটের বিশেষ একটি উপাদান যার সাহায্যে রোবটে মানুষের মত অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। এর সাহায্যে রোবট তার আশেপাশে অবস্থান করা যেকোন বস্তু সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এসব তথ্য একটি রোবটের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাছাড়া সেন্সর বা অনুভূতি রোবট এর চোখে থাকা ছোট ছোট ক্যামেরাগুলির সাহায্যে তার সামনে থাকা যেকোন বস্তুর অবস্থান, দূরত্ব, আকার-আকৃতি সহ রং এবং অন্যান্য বাহ্যিক গুণসমূহ নির্ধারন করতে সাহায্য করে।
ম্যানিপুলেশন: ম্যানিপুলেশন হলো রোবটের অবস্থান পরিবর্তন করার ক্ষমতা। এর সাহায্যে রোবট তার হাতের আঙুলের দ্বারা কোন বস্তু যেমন ধরতে পারে ও স্থানান্তর করতে পারে, তেমনি তার পায়ের দ্বারা সামনে-পিছনে বা ডানে-বামে চলাচল করতে পারে।