বাতিস্তা কিভাবে তার অনলাইন জার্নি শুরু করেছিলো?

বাংলাদেশের অনলাইন কমিউনিটিতে অন্যতম পরিচিত মুখ মাসুক সরকার বাতিস্তা। তিনি একজন সফল ফ্রিলান্সার, মেন্টর এবং আইটি উদ্যোক্তা। নিজে সফল হয়েছেন এবং পাশাপাশি প্রতিনিয়ত অসংখ্য স্টুডেন্ট কে সফল করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আজকের এই ইন্টারভিউতে আমরা জানবো সে কিভাবে তাঁর অনলাইন জার্নি শুরু করেছিলো? কি কি সমস্যা ফেস করেছিলো? এবং তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।

সংক্ষেপে আপনার পরিচয়

আমি মাসুক সরকার বাতিস্তা। ফাউন্ডার অফ এমএসবি একাডেমী। আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি থেকে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অনার্স কমপ্লিট করেছি ২০১৭ সালে। লেখাপড়ার পাশাপাশি Windows, Android এর অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কাজ করতাম। মূলত প্রফেশনালভাবে অনলাইনে কাজ করছি ২০১৭ সাল থেকে। কাজ করার ক্ষেত্রে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও মেকিং আমার পছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। মানুষকে শিখানোর লক্ষ্য নিজের নামে (Masuk Sarker Batista) ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলাম। এখন সেই চ্যানেলে প্রায় ১,২৫,০০০+ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে কিভাবে জানতে পারলেন?

২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি লাইফের সেকেন্ড ইয়ারে “Microsoft Bangladesh” আমাদের ইউনিভার্সিটিতে একটা এক্সাম নিয়েছিলো C# এর উপর। যারা ভালো করবে তারা মূলত Microsoft Student Partner হতে পারবে। সেই এক্সামটা আমিও দিয়েছিলাম আর আল্লাহ্‌ রহমতে তখন সিলেক্টও হয়েছিলাম। তখন আমি আর আমার আরো ২ বন্ধু মিলে Microsoft-এর উইন্ডোজ ফোনের জন্য অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখছিলাম এবং আমাদের বানানো অ্যাপগুলো Windows Store-এ সাবমিট করেছিলাম। তখন এই কাজ করতে করতে একটা সময় আমার চিন্তা আসল যে অ্যাপ বানাচ্ছি কিন্তু কোন ইনকাম তো হচ্ছে না! তাহলে অ্যাপ বানিয়ে লাভ কি?! 

masuk sarker batista

সেই চিন্তা থেকেই ঘাটাঘাটি শুরু এবং পরে জানতে পারলাম যে অ্যাপে Google Admob এর অ্যাড বসিয়ে ইনকাম করা যায়। তারপর থেকে আমার বানানো অ্যাপগুলোতে অ্যাড বসিয়ে সাবমিট করতে থাকলাম আর সেই সাথে Android App Development শিখে  একইভাবে অ্যাড বসিয়ে সিম্পল কিছু অ্যাপ বানিয়ে সাবমিট করলাম। তারপর দেখলাম প্রতিদিন কিছু ডলার ইনকাম হওয়া শুরু হয়েছে!!! এখন ইনকাম বাড়াতে লাগবে বেশি ইউজার, আর এই অ্যাপের ডাউনলোড বাড়ানোর জন্য যখন অনলাইনে সার্চ করলাম তখনই সামনে আসলো অ্যাপ মার্কেটিং এর নানান টেকনিক। যেটাকে মূলত বলা হয় অ্যাপ স্টোর অপটিমাইজেশন (ASO)। সেই অ্যাপ মার্কেটিং থেকেই মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং লাইনে আসা এবং কাজ করা।  

কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখলেন?

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার সময় পাশাপাশি আমি ওয়েব ডেভেলপমেন্টও শেখা শুরু করেছিলাম। কারণ আমি চাচ্ছিলাম নিজের ওয়েবসাইটেই মার্কেটিং এর শেখা টেকনিকগুলো এপ্লাই করতে। মূলত আমি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখেছি শুরুতে ইউটিউব ভিডিও দেখে এবং ব্লগ পড়ে। পরবর্তীতে আমি মার্কেটিং এর বেশ কিছু প্রিমিয়াম কোর্স করেছিলাম। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Kevin David এর Shopify Ninja Masterclass and Marketing Agency Program এই ২টি কোর্স। এছাড়া Tai Lopez, Dan Lok আমার পছন্দের ২জন মেন্টর। 

ব্যর্থ হয়েছেন কখনো?

আসলে ব্যর্থ হয়েছি বহুবার!! অনলাইনে কাজ করার ক্ষেত্রে যে এত নিয়ম কানুন মেনে কাজ করা লাগে সেই ব্যাপারে আসলে জানা ছিল না। তাই প্রতি ক্ষেত্রে যখনই বেশি ইনকামের লোভ করে একটু চালাকি করতাম তখনই বাঁশটা খেতাম😀 

একবার একটা উইন্ডোজ মোবাইলের গেইম সেল করার জন্য ৩০০ ডলার দিয়ে সোর্স কোড কিনি একটা সাইট থেকে, পপুলার একটা ব্র্যান্ডের নেইম ব্যাবহার করে ভিতরে কোন কিছু চেঞ্জ না করেই গেইমটা স্টোরে পাবলিশ করে দেই। গেইমটা ছিল পেইড, সম্ভবত ৪/৫ ডলার দাম দিয়েছিলাম। ১ মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকার মত সেল হয়েছিল কিন্তু ঠিক যখন আর মাত্র এক সাপ্তাহ বাকি ছিল টাকা সেন্ড করার ঠিক তখনই আমার ডেভেলপার অ্যাকাউন্টটা ওরা সাসপেন্ড করে দেয় আরেকজনের ব্র্যান্ড নেইম ব্যাবহার করার ফলে। সেই সময়ে ৩০০ ডলারের দাম আমার কাছে ৩ লাখ টাকার মত ছিল। এত বড় ধাক্কা খেয়ে সেই সময়ে খুবই ভেঙ্গে পরেছিলাম। 

বর্তমানে কি নিয়ে কাজ করছেন?

বর্তমানে আমরা আমাদের ই-লার্নিং প্লাটফর্ম MSB Academy (msbacademy.com) নিয়ে কাজ করছি। বাংলায় বেস্ট কোয়ালিটির কোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট প্রোভাইড করাই মূলত আমাদের এই অনলাইন একাডেমীর লক্ষ্য। এছাড়া একটি Job Portal সাইট এবং Freelancing Marketplace তৈরির কাজ করছি। 

MSB Ask নামে আমাদের একটি প্রশ্ন-উত্তর অ্যান্ড নলেজ শেয়ারিং প্লাটফর্ম আছে। এইটা নিয়েও কিছু প্ল্যান আছে, যা একটু একটু করে ইমপ্লিমেন্ট করা হচ্ছে। আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে Quora প্লাটফর্মের থেকেও বেটার কিছু হবে এই এমএসবি আস্ক প্লাটফর্ম। 

আমার নিজের Udemy অ্যান্ড SkillShare প্লাটফর্মে বেস্টসেলিং প্রায় ২০+ কোর্স রয়েছে। সেখানেও আমার গ্লোবালি প্রচুর স্টুডেন্ট রয়েছে। আমি আর আমার ফ্রেন্ডের সাথে মিলে কানাডা ভিত্তিক একটি ডিজিটাল এজেন্সির তৈরি করেছি, সেখানে আমরা আমাদের ক্লাইন্টদের ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস দিচ্ছি। এছাড়া SaaS বেইসড প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংও করছি।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যত কেমন?

এক কথায় উজ্জ্বল। কারণ বর্তমান সময়ের সব কিছুই এখন অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। মোবাইল, কম্পিউটার এখন সবার হাতে হাতে। এর জন্য অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানিগুলো এখন ডিজিটাল ভাবে মার্কেটিং করার ক্ষেত্রেই বেশি ইনভেস্টমেন্ট করছে। আর তাই লোকাল এবং গ্লোবাল কোম্পানিগুলো তাই এখন দক্ষ মার্কেটার খুজছে। ভবিষ্যতে যে এর চাহিদা আরো বাড়বে এবং এক্সপার্ট ডিজিটাল মার্কেটারদের ভবিষ্যৎ যে এই ক্ষেত্রে কতটা সম্ভবনাময় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  

অফলাইনে কিছু করছেন?

রিয়েল এস্টেট বিজনেসের সাথে জড়িত আছি।  

আপনে কি নিজেকে সফল মনে করেন?

আসলে সফলতার কোন লিমিট নাই, এটা একটা জার্নি। নিজের যা ভালো লাগবে এবং মানুষের উপকারে আসবে এইরকম কাজ মৃত্যুর দিন পর্যন্ত করে যেতে পারলেই নিজেকে সফল মনে করবো। 

আপনার ভবিষ্যত প্ল্যান কি?

অনলাইন বিজনেস করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম অটোমেশন সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস ব্যাবহার করা লাগে। এগুলা ব্যাবহার করতে করতে এখন নিজেরও ইচ্ছা আছে যে ভবিষ্যতে আমরাও একটা SaaS বেইসড প্রোডাক্ট গ্লোবাল মার্কেটে লঞ্চ করব। 

এছাড়া বাংলাদেশের স্কিলফুল তরুণদের জন্য একটা ফ্রীলান্সিং মার্কেটপ্লেস তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছি। দক্ষ কোন মানুষ যাতে বেকার না থাকে সেই প্ল্যান নিয়েই মূলত আমরা এখন কাজ করছি।

নতুন মার্কেটারদের  উদ্দেশ্য আপনার উপদেশ কি?

“সহজ কিছু কাজ করে ইনকাম”, “২-৩ মাস কাজ করেই মার্কেটার হয়ে যাওয়া” এই মনসিকতা আমাদের বাদ দিতে হবে। যা খুব সহজেই শিখে করা যায়, সেইসব কাজ করে আসলে শক্তপক্ত ক্যারিয়ার দাড় করানো সম্ভব না। তাই এডভান্স কিছু শিখে রিয়েল লাইফে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিৎ। দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যান করে আগাতে হবে, তাহলেই মার্কেটার হিসাবে ভালো করা সম্ভব।

বিয়ের পাত্র হিসেবে সরকারি চাকরিজীবী ভালো নাকি ফ্রিল্যান্সার?

আমার মতে সৎ পথে ইনকাম করতে পারলে, আর চরিত্র ঠিক থাকলে কোনটাই খারাপ না। অবশ্য এর পারফেক্ট উত্তর মেয়ের বাবারাই ভালো দিতে পারবে😅 

Leave a Reply