ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার পদ্ধতি ও জনপ্রিয় ডার্ক ওয়েব সাইট লিংক

ডার্ক ওয়েবকে ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়া বলা হলেও এর পজিটিভ দিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক বেশি গোপনীয়তা থাকার কারণে সাধারণ ইউজার এতে প্রবেশ করা নিয়ে যেমন সন্দেহের মুখে থাকে তেমনি অজানা ভয় কাজ করে। আমাদের আজকের লেখায় ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার পদ্ধতি সহ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কিছু ডার্ক ওয়েব সাইট লিংক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার পদ্ধতি 

ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের অন্ধকার রূপ। একজন সাধারণ ইউজার থেকে ইন্টারনেটের বিশেষ এক অংশ লুকিয়ে রাখার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত যে সকল বিষয় সবার সামনে আলোচনা করা যাবে না সে সকল বিষয় এখানে রাখা হয়। আপনি একটি সাধারণ ব্রাউজারের মাধ্যমে যেমন ইউটিউব ফেসবুক ইত্যাদি ব্যবহার করেন তেমনি ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করার জন্য ব্রাউজার প্রয়োজন। 

গতানুগতিক ব্রাউজার দিয়ে আপনি কখনোই ডার্ক ওয়েবে যেতে পারবেন না। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে বিশেষায়িত ব্রাউজার। নিচে কোন কোন মাধ্যম ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েব ইউজ করা যাবে তা দেওয়া হলো। 

টর ব্রাউজার

ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের সব থেকে প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে টর ব্রাউজার ব্যবহার করা। সাধারণত এই ব্রাউজার তৈরি করা হয়েছে ইন্টারনেট থেকে এর ইউজারকে লুকিয়ে রাখার জন্য। অর্থাৎ আপনি যখন টর ব্রাউজার ইউজ করবেন তখন কোন ওয়েবসাইট আপনার ডাটা সংগ্রহ করতে পারবে না। যেমন আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তখন উক্ত ওয়েবসাইটের সার্ভারে আপনার কিছু ডাটা জমা হয়। 

এই মাধ্যম ইউজ করেই হ্যাকার আপনার থেকে গুরুত্বপূর্ণই তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে বিপদে ফেলে। টর নেটওয়ার্ক তৈরি করার সময় এই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডার্ক ওয়েবে আমরা যে সকল ওয়েবসাইট দেখতে পাই সেগুলোর লিংক সারফেস ওয়েবের লিংক থেকে একদম আলাদা। 

সারফেস ওয়েবে অর্থবোধক এবং সহজে মনে রাখা যায় এমন নাম দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। কিন্তু ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইট লিংক গুলো একদম আলাদা এবং সহজে বোঝার মত না। এই কারণে সেই লিংক গুলো সাধারণ ব্রাউজারে কাজ করে না। এই জন্য ডার্ক ওয়েব ভিজিট করার জন্য বিশেষায়িত টর ব্রাউজার তৈরি করা হয়। 

ভিপিএন 

আমরা জানি ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়া। এখানে কিছু ভালো সাইট থাকলেও সেগুলো খুব কম। এটি আসলে ইলিগাল ওয়েবসাইটের কারখানা। এই কারনে বিশ্বের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো তাদের প্রযুক্তি শক্তি কাজে লাগিয়ে ডার্ক ওয়েব মনিটর করার চেষ্টা করে। এ কারণে এই দুনিয়াতে প্রবেশ করার জন্য সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। 

যদিও টর ব্রাউজারে এমন অনেক সুবিধা দেওয়া আছে যা মোটামুটি সিকিউরিটি প্রদান করে। তবে শুধু টর ব্রাউজার ইউজ করে ডার্ক ওয়েবে গেলে আপনার আইএসপি সহ গোয়েন্দা সংস্থা আপনার কার্যক্রম দেখতে পাবে। 

এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে টর নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার পূর্বে আপনাকে একটি ভালো মানের ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে পেইড ভিপিএন গুলো আপনার আইডেন্টিটি লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ ভিপিএন সহ যখন আপনি টর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব ইউজ করবেন তখন ইন্টারনেটে আপনাকে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পরবে। 

টেইলস ওএস

ডার্ক ওয়েব ভিজিট করার জন্য টর ব্রাউজার এবং ভিপিএন একটি সিকিউর মাধ্যম। কিন্তু এগুলো কখনোই পুরোপুরি সিকিউরিটি প্রদান করে না। এই ক্ষেত্রে আপনি ফুলপ্রুফ গোপনীয়তা পেতে চাইলে টেইল ওএস ব্যবহার করতে হবে। 

এটি একটি ডেবিয়ান নির্ভর লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। টেইল মূলত তৈরি করা হয়েছে সিকিউরিটির কথা চিন্তা করেই। অর্থাৎ ইন্টারনেটে ইউজারের পরিচয় পুরোপুরি লুকিয়ে রাখার জন্য বিশেষভাবে এই অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। 

টেইল ওএস ইউজ করার জন্য আপনি দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি সরাসরি আপনার সিস্টেমে ইন্সটল অথবা পেনড্রাইভে ইন্সটল দিয়ে পোর্টেবল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে যেহেতু সিকিউরিটির উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করা হবে সেহেতু পেনড্রাইভে ইন্সটল করে ব্যবহার করা সব থেকে উত্তম। 

তো প্রথমে আপনাকে এর ISO ফাইল ডাউনলোড করে নিতে হবে। তারপর একটি ৮ জিবির উপরে স্পেস সহ পেনড্রাইভ নিতে হবে। মনে রাখবেন পেনড্রাইভে জায়গা যত বেশি হবে আপনার জন্য টেইল ইউজ করা তত স্মুথ হবে। 

যাইহোক, টেইল এর ইমেজ ফাইল পেনড্রাইভে ফ্ল্যাশ করার জন্য আপনি অনেক ধরনের অ্যাপ পাবেন। এদের মধ্যে থেকে আপনার পছন্দমতো যে কোন একটা দিয়ে পেনড্রাইভ টেইল দিয়ে রেডি করে নিন। এভাবে আপনি আপনার পেনড্রাইভে বিশ্বের সব থেকে সিকিউর অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল ব্যবহার করতে পারবেন। 

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কিছু ডার্ক ওয়েব সাইট লিংক

নিচে বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় কিছু ডার্ক ওয়েবসাইট অর্থাৎ অনিয়ন সাইট লিংক দেওয়া হলো। 

Ahmia

এটি একটি ডার্ক ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন। আহিমা অনেকটা গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মত কাজ করে। এর একটি নিজস্ব সার্চ ক্রলার আছে যা অনিঅন সাইট গুলো ক্রল করে ইঞ্জিনে লিস্ট করে থাকে। তবে এখানে অবশ্যই উক্ত সাইট গুলোর রোবট টেক্সট ফাইলে ক্রল করার অনুমতি থাকতে হবে। আপনি চাইলে আপনার ডার্কওয়েব সাইট এখানে ইন্ডেক্স করার জন্য অ্যাড করতে পারবেন। 

DuckDuckGo

ঢাকঢাকগো একটি আননিমাস সার্চ ইঞ্জিন। গুগল এবং বিং যেখানে আপনার সার্চ হিস্টোরি থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের তথ্য তাদের নিজস্ব সার্ভারে সংরক্ষণ করে সেখানে ঢাকঢাকগো আপনার কোন কিছু স্টোর করে না। ডার্কওয়েব এবং সারফেস ওয়েব দুই জায়গায় এটি ব্যবহার করা যায়। 

The Hidden Wiki

এটি অনেকটা সারফেস ওয়েবের উইকিপিডিয়ার মত কাজ করে। এখানে আপনি সার্চ করার মাধ্যমে অনেক অনিঅন সাইটের লিংক পাবেন। 

Tor Links

এটি জনপ্রিয় ডার্কওয়েব অ্যাড্রেস গুলোর ব্যাকআপ সার্ভার হিসেবে কাজ করে। যখন প্রচলিত সার্চ া হিডেন সাইট খুঁজে পাবেন না তখন এখানে এসে উক্ত সাইট খুঁজে পাবেন। 

The New York Times

নিউ ইয়র্ক টাইমস ডার্কওয়েবে তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। শুধু তারা নয় বিশ্বের অনেক বড় বড় পত্রিকা তাদের অনলাইন ভার্সন ডার্কওয়েবে রেখে দিয়েছে। 

Facebook

সারফেস ওয়েবে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে ফেসবুক ইউজ করা যায়। আপনি চাইলে ডার্ক ওয়েবে তাদের এই ভার্সন ইউজ করে গোপনে ফেসবুকিং করতে পারবেন। 

Impreza Hosting

আপনার যদি কখনো ডার্কওয়েবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে ইচ্ছা হয় তাহলে এখান থেকে হোস্টিং নিয়ে শুরু করতে পারবেন। এখানে ক্রিপ্টো দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন। 

ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার পদ্ধতি 

ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা

নিচে ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা বর্ণনা করা হলো।

ডার্ক ওয়েব মানেই অবৈধ 

আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে ডার্ক ওয়েব মানেই অবৈধ। তবে বাস্তবে এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। এখানে কিছু ওয়েবসাইট আছে সম্পূর্ণ বৈধ এবং নিয়ম মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে এখানে অনেক অবৈধ ওয়েবসাইট আছে যারা বেআইনি কাজের সাথে জড়িত। তবে আপনি চাইলেই এই সকল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবেন না। 

এখানে খুনি ভাড়া পাওয়া যায়

একটা লম্বা সময় ধরে আমাদের মাঝে এই ধারণা বলবৎ ছিল যে ডার্ক ওয়েবে টাকার বিনিময়ে খুনি ভাড়া করা যায়। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা এবং বানোয়াট কথা। যদিও এখানে অনেক বেআইনি কার্যক্রম চলে তবে ভাড়ায় চালিত খুনি পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, আপনার যদি অপরাধী গ্রুপের সাথে যোগাযোগ থাকে তাহলে ডার্ক ওয়েব থেকে ড্রাগস কিনতে পারবেন। কিন্তু একজন সাধারণ ইউজার হিসেবে এখানে তেমন কিছুই করতে পারবেন না।

রেড রুম 

ধারণা করা হয় ডার্ক ওয়েবে রেড রুম নামে একটি ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট আছে। এখানে যারা ভিডিও দেখে তাদের দেওয়া অর্থের বিনিময়ে রেড রুমের ভেতরে ভিক্টিম নিয়ে এসে নির্যাতন করা হয়। অর্থাৎ একজন সাবস্ক্রাইবার যেমন ভাবে নির্যাতন করতে বলবে সেই রুমে সেভাবেই নির্যাতন করা হয়। এটি আসলে একটি ভ্রান্ত ধারণা এবং এই সাইটের কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। 

এটি শুধু অপরাধীদের জন্য 

নামের কারণে সবাই ডার্ক ওয়েবকে মনে করে এখানে শুধু অপরাধী বিচরণ করে। তবে এখানে যেমন ক্ষতিকর সাইট আছে তেমনি উপকারী অনেক অফিশিয়াল ওয়েবসাইট আছে। অর্থাৎ ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ভালো এবং মন্দ এর মিশ্রিত একটি মাধ্যম। এখানে আপনি কোন উদ্দেশ্যে প্রবেশ করবেন তার উপর আপনি অপরাধী না নিরপরাধ তা নির্ভর করে।

ডার্ক ওয়েব ভিজিট করা কঠিন

অতিরিক্ত গোপনীয়তা ও নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারণার জন্য অনেকে মনে করে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা কঠিন। তবে আপনি টর নেটওয়ার্ক ইউজ করে অতি সহজেই ইন্টারনেটের এই রহস্যময় জগতে প্রবেশ করতে পারবেন। 

ডার্ক ওয়েব ভিজিট করলেই হ্যাক হতে হবে

এটি পুরোপুরি ঠিক না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিক। সাধারণত ডার্ক ওয়েবে কোন ধরনের আইন কানুন না থাকার কারণে হ্যাকারগন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ম্যালওয়্যার ইনপুট করে থাকে। যা থেকে আপনি সহজেই হ্যাক হতে পারেন। তবে টর ব্রাউজারের কিছু ফিচার যেমন জাভাস্ক্রিপ্ট বন্ধ করে রাখলে এমন অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 

এখানে সব কিনতে পাওয়া যায়

যদিও ডার্ক ওয়েবে অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে অনেক দৈনন্দিন জিনিস পাওয়া যায়। তবে অনেকেই মনে করে এখানে পৃথিবীর সকল কিছু এমনকি মানুষ বা ক্রীতদাস কিনতে পাওয়া যায়। তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। 

এখানে যা ইচ্ছা তাই করা যায়

আমরা মনে করি ডার্ক ওয়েব যেহেতু কোন দেশের সরকার বা সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করে না সেহেতু এখানে সব কিছুই করা যাবে। বস্তুত আপনি এই ধরনের কোন চিন্তা করলে ভুল করবেন। যদিও আপনি এই ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করেন তবে ইন্টারনেট প্রভাইডার এবং গোয়েন্দা সংস্থা আপনার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে পারবে। 

উপরিউক্ত আলোচনায় ডার্ক ওয়েবের সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা, এতে প্রবেশ করার বিভিন্ন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনার মধ্যে থাকা সন্দেহ এবং ভুল ধারণা পরিবর্তন হয়ে গেছে। 

Leave a Reply