হেডফোন

অরিজিনাল হেডফোন চেনার উপায় – কম দামে ভালো হেডফোন

বর্তমানে বাজারে কত দামের, কত রকমের এবং কত কত কোম্পানির হেডফোন যে রয়েছে তা আপনার আমার ধারণার অনেক বাহিরে। আর এত এত হেডফোনের ভীরে একটি অরিজিনাল হেডফোন খুঁজে বের করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য একটি কাজ এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে অসম্ভবও বলা চলে। 

তাই একজন বুদ্ধিমানের কাজ হবে হেডফোন ক্রয় করার পূর্বে অরিজিনাল হেডফোন সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা। যাতে করে সহজেই একটি অরিজিনাল পণ্য পছন্দ করা যায়। কেননা কেউই তার কষ্টের টাকা এমন জিনিসে ব্যয় করতে চাইবেন না যেটি নিয়ে তাকে ঠকতে হয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে একটি অরিজিনাল হেডফোন পছন্দ করা যায়। 

Brand

একটি ভালো এবং অরিজিনাল হেডফোনের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করে তার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্র্যান্ড। আপনি যত সময় ও বাজেট নিয়ে যত ভালো ব্র্যান্ড এর হেডফোন নিতে পারবেন, সেটি ততবেশি টেকশই এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হবে। 

স্বল্প দামে ভালো মানের হেডফোন পেতে চাইলে নূন্যতম বিভিন্ন চাইনিজ ব্যান্ডগুলো যেমন- লেনোভো, শাওমি, ওয়ানপ্লাস প্রভৃতি ব্র্যান্ডের হেডফোন নিতে পারেন। তবে আপনার বাজেট যদি কিছুটা বাড়াতে পারেন তাহলে ASUS, SONY, PLANTRONICS প্রভৃতি ব্র্যান্ডের হেডফোন ক্রয় করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 

Sound Quality

হেডফোনের প্রধান কাজই হলো শব্দ গ্রহণ ও শব্দ বিতরণ করা এবং শব্দকে সঠিকভাবে উপভোগ করার জন্যই মূলত আমরা পয়সা খরচ করে হেডফোনগুলো কিনে থাকি। তো সেক্ষেত্রে সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক বড় একটি বিষয়। 

অর্থাৎ একটি অরিজিনাল হেডফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি বরাবরই ভালো থাকে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব পণ্য ক্রয় করার সময় এই বিষয়গুলো তেমন চেক করার সুযোগ থাকেনা। তো সেক্ষেত্রে পণ্যের ফিচারসমূহের মধ্যে এর সেন্সিটিভিটি চেক করে নিতে পারেন। সাধারণত একে dB/mW এককে প্রকাশ করা হয়। এই dB যত বেশি হবে সাউন্ড কোয়ালিটিও তত ভালো হবে। তাছাড়া নয়েজ আইসোলেটিং সিস্টেম আছে কিনা তাও দেখে নিতে পারেন। 

Materials

যেকোন পণ্যের ক্ষেত্রে ম্যাটারিয়ালস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হেডফোনের ক্ষেত্রেও তাই। হেডফোনের প্রধান ম্যাটারিয়ালস গুলো হলো পিভিসি (PVC), আ্যলুমিনিয়াম (Aluminum), সিলিকন (Silicon), রাবার (Rubber) এবং প্লাস্টিক (Plastic). 

অরিজিনাল হেডফোনে এই উপাদানগুলো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয় বলে সেগুলো হয় ওজনে হালকা, নরম এবং আরামদায়ক। অপরদিকে যেই হেডফোনটি অরিজিনাল নয় সেটি মূলত শক্ত ও ওজনে ভারী হয়ে থাকে এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। 

কম দামে ভালো হেডফোন

একটি হেডফোন যত দাম দিয়ে যত ভালো ব্রান্ডের থেকে নিতে পারবেন হেডফোনটি ততই ভালো হবে এবং ব্যবহার করে আরাম পাবেন। তবে যদি কারো ইমার্জেন্সি একটি হেডফোনের প্রয়োজন হয় কিন্তু বাজেট স্বল্পতার কারণে ক্রয় করতে অপারগতার স্বীকার হয়ে থাকেন, তবে বাজারে কম দামে কিছু ভালো মানের হেডফোনও আপনি পেতে পারেন। চলুন দেখে নেই কম দামে কিছু ভালো হেডফোন নাম, ফিচারস এবং দাম।

Philips SBCHL140 On-Ear Headphones

বিশ্বের সবথেকে সেরা এবং নামীদামি কোম্পানিগুলোর মাঝে ফিলিপস অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি কোম্পানি। যাদের অন্যান্য যেকোন প্রোডাক্টের ন্যায় হেডফোনগুলোও হয় বেশ আকর্ষণীয়, উন্নত ফিচার সমৃদ্ধ এবং টেকসই। কম দামে তাকযুক্ত অন-ইয়ার হেডফোন হিসেবে ফিলিপস এর SBCHL140 মডেলের হেডফোনটি হতে পারে যে কারোর জন্য একটি বেস্ট চয়েজ।

হেডফোনটি ওজনে যেমন হালকা তেমনই অত্যন্ত আরামদায়ক। তাছাড়া এতে রয়েছে হাই কোয়ালিটির সাউন্ড ইফেক্ট এবং 30 mm স্পিকার ড্রাইভার। হেডফোনটির বর্তমান বাজার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১, ১৯৯ টাকা। 

Havit HV-i37

হ্যাভিট কোম্পানির i37 মডেলের এই হেডফোনটি এরটানা দীর্ঘক্ষন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক একটি হেডফোন। মাত্র ১৫ গ্রাম ওজনের এই হেডফোনটিতে রয়েছে একটি বিল্ট ইন মাক্রোফোন এবং ডিভাইস বের না করেই ভলিউম কন্ট্রোল করার সুযোগ।

এছাড়াও এতে রয়েছে সর্বোচ্চ টানা ১০ ঘন্টা প্লে টাইম ও ১২ ঘন্টা টক টাইম সুবিধা এবং চারটি আলাদা আলাদা রঙে আকর্ষণীয় ডিজাইন। তাছাড়া HV-i37 মডেলের এই ইয়ারফোনটিতে রয়েছে 5.0 ভার্সনের ব্লুটুথ টেকনোলজি এবং ওয়াটারপ্রুফ সিস্টেম। বর্তমানে এই হেডফোনের সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ১, ১৬০ টাকা। 

Zebronics Pleasant Headphone

ZEBRONICS কোম্পানি দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। কম দামে ভালো মানের প্রোডাক্ট সরবরাহ করার জন্য তারা সর্বদা বদ্ধপরিকর। আমাদের তালিকার এ পর্যায়ে রয়েছে জেব্রনিক্স কোম্পানির ZEBRONICS pleasant হেডফোনটি। 

এই হেডফোনটির হাই কোয়ালিটির সাউন্ড সিস্টেম এবং ভলিউম কন্ট্রোল সিস্টেম। এছাড়াও এতে রয়েছে একটি কল ফাংকশন এবং 40 mm সাইজের একটি ড্রাইভার। এই ইন-ইয়ার ওয়্যারড হেডফোনটি আপনি পেয়ে যাবেন বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ৪০০ টাকার ভেতরে। 

Lenovo LP1s TWS Bluetooth Earphone

স্বল্প মূল্যে মানসম্মত প্রোডাক্ট হিসেবে লেনোভো LP1s TWS ব্লুটুথ হেডফোনটি মিউজিক প্রেমিকদের নিকট এখন অনেক জনপ্রিয়। দ্রুত চার্জ হওয়ার পাশাপাশি এই হেডফোনের রয়েছে ৪ ঘন্টা ব্যাটারি লাইফ এবং ব্লুটুথ ৫.০ ভার্সন। 

তাছাড়া হাই কোয়ালিটির সাউন্ড, আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেকনোলজি হেডফোনটিকে নিয়ে গিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। এমনকি এই হেডফোনটি যেকোন আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য সমানভাবে কার্যকর। লেনোভো TWS ব্লুটুথ হেডফোনের বর্তমান সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য মাত্র ১, ৩৫০ টাকা। 

Xiaomi Mi Redmi TWSEJO4LS Airdots 

কম দামে ভালো মানের পণ্য সরবারহের জন্য শাওমি বরাবরই বেশ প্রশংসিত একটি কোম্পানি। তাদের তৈরি হেডফোনগুলোও বেশ আকর্ষণীয় এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। এছাড়া তারা তাদের প্রোডাক্টে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব নিয়ে আসেন। 

শাওমি TWSEJO4LS মডেলের হেডফোনটি বর্তমানে গ্রাহকদের নিকট অনেক সমাদৃত একটি হেডফোন। এর মূল বিশেষত্ব হলো এতে রয়েছে একটি বিল্ট ইন Bluetooth 5.0 চিপ। যেটি বর্তমানে সর্বশেষ জেনারেশন চিপ এবং পূর্বের যেকোন জেনারশনের চেয়ে এটি অনেক দ্রুত কাজ করে ও দীর্ঘদিন সার্ভিস প্রদানে সক্ষম। 

এছাড়া এই হেডফোনটি ওজনে খুবই হালকা। কিন্তু যথেষ্ট টেকসই। এছাড়াও এই তারবিহীন ইন-ইয়ার ব্লুটুথ হেডফোনটির রয়েছে সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ। সুতরাং আপনি যদি ওয়্যারলেস ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তবে মোটামুটি কম দামে Redmi Airdots হেডফোনটি হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ। হেডফোনটির বর্তমান সর্বোচ্চ বাজার মূল্য মাত্র ২০৯০ টাকা ।

বর্তমান সময় ও যুগের প্রেক্ষাপটে হেডফোন এর গুরুত্ব এবং চাহিদা বর্ণনা করা একদমই অপ্রয়োজনীয় মনে করি। কেননা এর গুরুত্ব আমরা প্রতি পদেই উপলব্ধি করতে পারি।

তবে একটি ব্যাপার আমাদের কোনক্রমেই ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, অতিরিক্ত কোন কিছুই সমীচীন নয়। হেডফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারও ঠিক তেমনি। দীর্ঘমেয়াদি এবং অতিরিক্ত হেডফোনের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে। সুতরাং সেক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হোন ও সুস্থ থাকুন। 

Leave a Reply