অনলাইনে ইনকাম করা আমাদের প্রায় সবার স্বপ্ন। তবে ইউটিউবে দেখা অনেক চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আমরা হর হামেশাই প্রতারিত হয়ে থাকি। তবে আমরা যদি সঠিক পথ বেছে নিয়ে ফ্রীল্যান্সিং পেশায় নিযুক্ত হই তাহলে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট না হয়ে বরং আর্থিকভাবে লাভবান হব। যাইহোক, আমাদের আজকের লেখায় আমরা নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি? বাংলাদেশের জন্য সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট কোনটি? ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি?
নতুনদের জন্য বর্তমান ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়া অনেক কঠিন এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিগত ৮ বছরে মানুষের মাঝে এই সেক্টর নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যা ভালো এবং মন্দ দুই বিষয়েই অবদান রেখেছে। যাইহোক, নিচে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হলো।
Guru
নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আসতে চাচ্ছে তাদের সবার প্রথমে যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে স্কিল। স্কিল না থাকলে এই সেক্টরে কোন ভাবেই ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। তবে কিছু মার্কেটপ্লেস রয়েছে জা একজন নতুন ফ্রীল্যান্সারকে স্বাগতম জানায়। গুরু সেগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। তবে এই মাধ্যমে কাজ করতে হলে আপনাকে হাই ভালু কাজ যেমন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কাজ সম্পর্কে স্কিল থাকতে হবে। নতুন হিসেবে এখানে আপনি প্রথমে ধাক্কা খেতে পারেন। তবে সামলে নিতে পারলে দেখবেন আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
এর বাসিক সাবস্ক্রিপসন ফ্রি থাকলেও প্রতিটি কমপ্লিট করা জবে এরা ৯% ফি কাটে। একজন নতুন ফ্রীল্যান্সারের জন্য যদিও এটি অনেক বেশি তবে কম্পিটিশন হিসেব করলে শুরুতে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি এখানেও কাজ খোঁজা শুরু করতে পারেন।
People Per Hour
পিপল পার আওয়ার একজন নতুন ফ্রীল্যান্সারের জন্য অনেক সহায়ক। যদিও এর মধ্যে কোন কোন ধরনের কাজ পাওয়া যাবে টা নির্দিষ্ট নয় তবে এখানে সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়। নতুনদের জন্য এই ধরনের বিসাল কাজের ক্ষেত্র অনেক সহায়ক। তবে এদের সার্ভিস চার্জ অনেক বেশি। পিপল পার আওয়ারে কোন প্রোজেক্টে যদি ৩৫০ ডলার বা তার নিচে পেমেন্ট নির্ধারণ করা থাকে তবে ২০% সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। অন্যদিকে ৩৫০ ডলারের উপরে যত বেশি পেমেন্ট হবে চার্জ তত কমবে। নতুনদের জন্য কাজ পাওয়া এবং কাজের ধরন বোঝা সহজ হলেও অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভ করা একটু জটিল।
Fiverr
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নতুন হিসেবে আসার জন্য ফাইবার সব থেকে সহজ এবং কার্যকরী। এর যেমন অনেক ধরনের ফিচার আছে তেমনি অনলাইনে বিশাল পরিমাণে রিসোর্স রয়েছে। এখানে নতুনদের জন্য যে ধরনের সুবিধা প্রয়োজন তার সব রয়েছে। শুরুতে ফ্রিল্যান্সিং জব পেতে আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। তবে এই প্ল্যাটফর্মে আপনি আপনার নিজের স্কিল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারবেন যেখানে ক্লাইন্ট এসে আপনাকে খুঁজে বের করবে। অর্থাৎ নতুন হিসেবে ফাইবারে অ্যাকাউন্ট করতে পারলে কাজ পেতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না।
১০ টি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
Freelancer
ফ্রীলান্সার ডট কম অনেক পপুলার এবং পুরাতন মার্কেটপ্লেস। এখানে অ্যাকাউন্ট খোলা সহজ এবং বৈধ উপায়ে ভেরিফিকেশন করা হলে দ্রুত অ্যাপ্রুভ হয়। আপনি নতুন ধরনের কাজ খোঁজার জন্য এখানে অ্যাকাউন্ট করতে পারেন। ফ্রীল্যান্সারে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের প্রোজেক্ট পাওয়া যায়।
SimplyHired
এই প্ল্যাটফর্ম পুরোটাই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তৈরি করা নয়। তবে এখানে অনেক ধরনের অনলাইন কাজ পাওয়া যায়। তো সিমপ্লি হাইয়ার প্ল্যাটফর্মে আপনি সার্চ করার মাধ্যমে জব খুঁজতে পারবেন। অন্যদিকে তারা প্রতিটি নতুন জব লিস্টিং হলে তা নটিফিকেশন এর মাধ্যমে ইউজারদের জানিয়ে দেয়।
Toptal
এটি আপওয়ার্ক ও ফাইবারের মতই অনেক দামি প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানি এখান থেকে ফ্রীল্যান্সার হায়ার করে। এই প্ল্যাটফর্মের ইউজারদের মধ্যে আমেরিকার ইউজার সব থেকে বেশি। প্রথমে এখানে অ্যাকাউন্ট করার পর আপনাকে অ্যাপ্লিকেশান অ্যাপ্রুভ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ হলে আপনি কাজের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন।
বাংলাদেশের জন্য সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট কোনটি?
নিচে বাংলাদেশের জন্য সেরা কিছু ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হলো।
ফাইবার
পৃথিবীতে যত ফ্রীল্যান্সার আছে তাদের সাপ্লাই দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়। অর্থাৎ বিশ্বে যত দেশ থেকে ফ্রিল্যান্স সার্ভিস দেয় তাদের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। যাইহোক, বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য ফাইবার সব থেকে সহজ এবং কার্যকরী। এখানে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে কাজ করা পর্যন্ত অনেক রিসোর্স পাওয়া যায়। কাজ করার পর পেমেন্ট নেওয়ার সময় তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। সর্বোপরি এটি বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিং করার সব থেকে সেরা মাধ্যম।
আপওয়ার্ক
আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হিসেবে অনেক পুড়নো এবং বিশ্বস্ত। এখানে প্রতিটি প্রোজেক্ট অনেক সাজানো ও গোছানো হয়ে থাকে। এখানে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের থেকে অভিজ্ঞদের কদর বেশি। এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিটি প্রোজেক্টে বিড করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কানেক্ট খরচ করতে হয়। অনেক বাংলাদেশি ফ্রীল্যান্সার এখান থেকে অনেক পরিমাণে অর্থ উপার্জন করে। আমাদের কথা মাথায় রেখে আপওয়ার্ক তাদের পেমেন্ট সিস্টেম অনেক সহজ এবং বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত করে রেখেছে।
ফ্রীলান্সার
এখানে অনেক ধরনের প্রোজেক্ট পাওয়া যায়। ফ্রীল্যান্সারে যেমন অনেক ছোট ছোট বিষয়ের উপরে কাজ পাওয়া যায় তেমনি অনেক বড় বড় বিষয়ের উপরেও কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ তাদের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এই মাধ্যম ব্যবহার করে তৈরি করেছে। এখানে কাজে বিড করার পাশাপাশি কন্টেস্টে যোগ দিয়ে আয় করতে পারবেন।
পিপল পার আওয়ার
উপরে বর্ণিত প্ল্যাটফর্ম থেকে এটি একটু কঠিন। পিপল পার আওয়ারে নতুন হিসেবে কাজ পাওয়া গেলেও ভালোমানের স্কিল নিয়ে জবে অ্যাপ্লাই করতে হয়। তবে বাংলাদেশের অনেক ফ্রীল্যান্সার এখানে তাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করছে। এর ধারাবাহিকটায় আপনি বাংলাদেশ থেকে পিপল পার আওয়ারে সহজেই ফ্রিল্যান্স প্রোজেক্ট করতে পারবেন।
কি কি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিং টাকা উঠানো যায়
বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং করে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে । বিশ্বব্যাপি অনেক দেশে পেপাল থেকে শুরু করে পেয়নিয়ার, স্ট্রাইপ ইত্যাদি সিস্টেম চালু রয়েছে। তবে বাংলাদেশের জন্য ফ্রিল্যান্সিং পেমেন্ট নেওয়ার জন্য খুব অল্প পরিমাণে গেটওয়ে রয়েছে। নিচে কি কি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিং টাকা উঠানো যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হলো।
পেওনিয়ার
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং টাকা উঠানোর জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহার হওয়া মাধ্যম হিসেবে পেওনিয়ারকে ধরা যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সার্ভিস চার্জ বাড়ানো সহ রেট কম দেওয়া সমস্যার জন্য এর ব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় কমে গেছে। তবে বিকাশের সাথে পার্টনার হওয়ার পর থেকে এর ব্যবহার কিছুটা বেড়ে গেছে এবং নতুন ফ্রীল্যান্সাররা এই মাধ্যম ব্যবহার করে বৃদ্ধি করেছে।
জুম
যদিও এটি শুধু ইউএসএ থেকে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় তবে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। জুমে ১০০০ ডলার পর্যন্ত পেমেন্ট নিতে চাইলে আপনাকে ৪.৯৯ ডলার চার্জ দিতে হবে। তবে এর থেকে বেশি পেমেন্ট নিতে চাইলে একদম ফ্রিতে অর্থাৎ বিনা চার্জে নিতে পারবেন।
ওয়াইজ/ট্র্যান্সফার ওয়াইজ
২০১১ সালে চালু হওয়া ট্র্যান্সফার ওয়াইজ পরবর্তীতে ওয়াইজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ পায় এবং অল্প দিনের মধ্যেই পপুলার হয়। সহজ ইন্টারফেস এবং দ্রুত প্রসেস হওয়ার জন্য বর্তমানে অনেক ফ্রীল্যান্সার এটি ইউজ করে। অন্যান্য পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের থেকে ওয়াইজ ডলার রেট বেশি দেয়। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় ব্যাংকে পেমেন্ট নেওয়া যায়। কোন ধরনের হিডেন ফি দিতে হয় না জন্য ওয়াইজ বিশ্বব্যাপি অনেক পপুলারিটি পেয়েছে।
উপরিউক্ত আলোচনায় একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি? সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আপনি বাংলাদেশ থেকে কোন কোন প্ল্যাটফর্ম ইউজ করতে পারবেন এবং সেখানে ইনকাম করা অর্থ কীভাবে দেশে নিয়ে আসতে পারবেন সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।