ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি এবং মার্কেটিং পদ্ধতি 

ফেসবুক মার্কেটিং বর্তমান সময়ের একটি প্রচলিত মার্কেটিং ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে সহজেই আপনি একই সময়ে অনেক পরিমাণ ক্রেতার কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছাইতে পারবেন। যে কারণে আপনার মার্কেটিং খরচ যেমন কমবে তেমনি বিক্রি বাড়ার সাথে সাথে প্রচার ও প্রসার ঘটবে। নিচে ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি এবং পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

ফেসবুক মার্কেটিং সাধারণত দুই ধরনের ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং ও পেইড ফেসবুক মার্কেটিং। কার্যকারিতা ও ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য যদিও সবাই পেইড মার্কেটিং এর দিকে বেশি ঝুঁকে তবে ফ্রি মার্কেটিং এর মাধ্যমেও সেল বৃদ্ধি করা যায়। নিচে পেইড এবং ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং

আমরা জানি ফেসবুক একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ ভিজিটর ভিজিট করতে আসে। সকল বয়স ও পেশার মানুষ এখানে আসে বলে যে কোন ব্যবসার জন্য এটি একটি আদর্শ মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। 

ফেসবুকে আপনি সহজেই যে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করতে পারবেন। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতই এখানেও কিছু রুলস আছে যা অবশ্যই মানতে হয়। তাছাড়া ফ্রি মার্কেটিং ফলাফল জেনারেট করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় নেয়। নিচে কোন কোন মাধ্যম ব্যবহার করে ফেসবুক ফ্রি মার্কেটিং করতে পারবেন তা দেওয়া হলো। 

ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং পদ্ধতি 

  • পেজঃ ফেসবুকে আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কিত পেজ তৈরি করে তা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারবেন। পেজে নিয়মিত টেক্সট, ইমেজ ও ভিডিও পোস্ট করে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারবেন। এতে যেমন আপনাকে অতিরিক্ত কোন অর্থ খরচ করতে হচ্ছে না তেমনি সহজেই বিশাল পরিমাণ মানুষের কাছে আপনার পণ্য সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দিতে পারছেন। 
  • গ্রুপঃ ফেসবুক গ্রুপ একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং টুল। এখানে আপনি সম্ভাব্য ক্রেতা অ্যাড করে তাদের সাথে আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি ফ্রিতে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে আপনার পণ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারবেন এবং তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে ফিচার উন্নয়ন করতে পারবেন। 
  • পোস্টঃ আপনি আপনার প্রোফাইলে বা পেজ অথবা গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট করার মাধ্যমে আপনার পণ্য সম্পর্কে মানুষের মাঝে আকর্ষণ তৈরি করতে পারবেন। ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আপনি ইমেজ, টেক্সট, ভিডিও, লিংক ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারবেন। যা যে কোন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অনেক কার্যকরী। 
  • ইভেন্টঃ ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে সরাসরি দেখা করে অথবা অনলাইনে কনফারেন্স করে পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। এতে আপনি চাইলে খরচ করে ইভেন্ট করতে পারেন অথবা কোনো খরচ না করেও মার্কেটিং করতে পারবেন। 

পেইড ফেসবুক মার্কেটিং

সূচনালগ্ন থেকে এই পর্যন্ত ফেসবুকের নানা উত্থান-পত্তন হয়েছে। তবে তাদের এক্সট্রা-অর্ডিনারি পেইড মার্কেটিং সুবিধা থাকার কারণে তারা মার্কেটে টিকে আছে। অর্থাৎ আপনি তাদের পেইড মার্কেটিং ফিচার ইউজ করে খুব সহজেই এবং বিস্তারিতভাবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার কাছে আপনার পণ্য বা সেবা পৌঁছাতে পারবেন। নিচে পেইড ফেসবুক মার্কেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

পেইড ফেসবুক মার্কেটিং পদ্ধতি

  • ইনস্ট্যান্ট অ্যাডঃ আমরা নিউজফিড স্ক্রোল করার সময় যে অ্যাড গুলো দেখি এগুলো হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট অ্যাড। এগুলো একজন ভিজিটর না চাইতেও কিন্তু দেখে। অর্থাৎ এতে ইম্প্রেশন বৃদ্ধি পায় এবং ক্লিক পরার চান্স অনেক বেশি থাকে। 
  • ফেসবুক অ্যাডঃ পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফেসবুক অ্যাড অনেক জনপ্রিয়। এমনকি ফেসবুকের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে এই অ্যাড। আপনি সঠিকভাবে রিসার্চ করে সঠিক দর্শকের কাছে এই অ্যাড পাঠাতে পারলে অনেক ভালো রেজাল্ট পাবেন। 
  • সার্চ অ্যাডঃ ফেসবুক সার্চ বারে সার্চ করলে দেখবেন অনেক ধরনের অ্যাড দেখায়। এগুলো করা হয় ফেসবুকের পেইড মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। 
  • টিভি অ্যাডঃ ফেসবুকের নিজস্ব একটি ভিডিও সেকশন আছে। এখানে লাইভ ভিডিও থাকার পাশাপাশি ফেসবুকের নিজস্ব টিভি সেকশন আছে। পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর আওতায় আপনি এখানে অ্যাড দেখাতে পারবেন। 
  • রিলস অ্যাডঃ বর্তমান সময়ে এটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে টিকটকের জনপ্রিয়তার কারণে ফেসবুক এবং ইউটিউব তাদের নিজস্ব রিল সেকশন চালু করেছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রথমে ইউটিউব এবং পরবর্তীতে ফেসবুক তাদের রিলস সেকশনে অ্যাড চালু করেছে। এতে যারা রিলস তৈরি করছে তারা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি এই মাধ্যমে অ্যাড দিয়ে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে। 
ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

ফেসবুক কি ভালো মার্কেটিং টুল?

জি, মার্কেটিং করার জন্য ফেসবুক অনেক ভালো একটি মাধ্যম। নিচে এটি কেন ভালো মার্কেটিং টুল তা বর্ণনা করা হলো। 

বিশাল মান্থলি ভিজিটর

বর্তমানে ফেসবুকে প্রায় ৩ বিলিয়নের থেকেও বেশি মান্থলি ভিজিটর রয়েছে। তাহলে চিন্তা করুন এখানে কি পরিমাণ মানুষ নিয়মিত আসে। অনেকেই দিনের বেশিরভাগ সময় ফেসবুক ভিজিট করে কাটায়। এই মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ক্রেতাদের আচার আচরণ ও অন্যান্য বিষয় ভিজ্যুয়ালি দেখতে পারবেন। যা আপনাকে মার্কেটিং সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া এখানে আপনি ফিল্টার করার অনেক অপশন পাবেন যা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে অনেক সহায়ক। 

ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

কার্যকরী ক্রেতার মিলনমেলা

প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ ভিজিটর ফেসবুক ভিজিট করে। এখানে সকল বয়সের নারী ও পুরুষ থাকে যারা বিভিন্ন দেশের এবং আলাদা আলাদা পারসোনালিটি সমৃদ্ধ। ফেসবুক আমাদের কাছে গোটা বিশ্ব থেকে এই সকল সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে এনে এক জায়গায় রাখে। এতে আমাদের যেমন পরিশ্রম কম হয় তেমনি আমাদের পণ্য ও সেবার উপর নির্ভর করে বিশেষ বয়সের ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারি। যা আমাদের মার্কেটিং খরচ কমায় এবং ব্যাবসায়িক উন্নতি ত্বরান্বিত করে। মোটকথা পেইড অথবা ফ্রি যে ধরনের মার্কেটিং করতে চান তা সফল করতে ফেসবুক অনেক ভালো ও কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হবে। 

সহজলভ্যতা 

ফেসবুক অনেক সহজলভ্য একটি সার্ভিস। আপনি এখানে যেমন অনেক সহজে অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন তেমনি এর ব্যবহার অনেক সোজা। আপনি আপনার ফোনে ফেসবুক অ্যাপ ইন্সটল করে লগইন করে ফেসবুক দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। অ্যাকাউন্ট করা থেকে মেইন্টেইন করা সকল বিষয় অনেক সহজ ও সাবলীল। যে কারণে খুব কম সময়ে এই প্ল্যাটফর্মে আপনি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারবেন। 

সহজ ইন্টারফেস

ফেসবুক তাদের সকল ধরনের সেটিংস ও কন্ট্রোল অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। আপনি যদি এই প্লাটফর্ম আরও ভালো করে এক্সপ্লোর করতে চান তাহলে মেটা বিজনেস সুইট ব্যবহার করতে পারেন। এখানে ফেসবুক ব্যবহার করে কোন ব্যাবসা পরিচালনা করার জন্য যে যে কন্ট্রোল থাকা জরুরি তার সব আছে। 

ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য কি?

নিচে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলো।

ফেসবুক পেজফেসবুক গ্রুপ
  • পেজ সবসময় পাবলিক থাকে।
  • এখানে সকল ধরণের অডিয়েন্স থাকে।
  • পেজ পাবলিক ফিগার, বিজনেসের জন্য প্রযোজ্য।
  • পেজে যা পোস্ট করা হয় তা পাবলিকের জন্য।
  • পেজ বিজনেস করার উদ্দেশ্যে তৈরি।
  • এসইও ফ্রেন্ডলি।
  • পেজে নিয়মিত পোস্ট করতে হয় না হলে র‍্যাঙ্ক হারায়।
  • অরগানিক রিচ কম।
  • পেজে ফিচার ও কন্ট্রোল বেশি থাকে।
  • গ্রুপ পাবলিক এবং প্রাইভেট থাকে।
  • এখানে আপনি নির্দিষ্ট অডিয়েন্স রাখতে পারবেন।
  • গ্রুপে একই মানসিকতার মানুষ থাকে।
  • গ্রুপে নির্দিষ্ট ভিজিটরের জন্য পোস্ট করা যায় যা অন্য কেউ দেখতে পারে না।
  • গ্রুপ থেকে বিজনেস করার পাশাপাশি সচেতনতা তৈরি করা যায়।
  • এসইও ফ্রেন্ডলি নয়।
  • গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট করার বাধ্যবাধকতা নেই।
  • অরগানিক রিচ বেশি।
  • গ্রুপে ফিচার ও কন্ট্রোল বেশি থাকে।
  • ফেসবুক মার্কেটিং এর একটি সুদূরপ্রসারী কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। উপরিউক্ত আলোচনায় ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

    Leave a Reply