চিঠি দিয়ে ভাব আদান প্রদান বা যোগাযোগ রক্ষা করার পদ্ধতি এখন অনেক পুরনো হয়ে গেছে। ইন্টারনেট আমাদের যোগাযোগ মাধ্যম অনেক সহজ করে দিয়েছে। চিঠির মাধ্যমে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কোন খবর পাঠাতে মাসের পর মাস পার হয়ে যেত। কিন্তু সৌভাগ্যবসত এখন শুধু কয়েক সেকেন্ড লাগে। ধীরে ধীরে ডাক হরকরার কাজ এখন ইন্টারনেট নিয়ে নিয়েছে। চিঠির বদলে এখন আমরা ইমেইল ব্যবহার করছি। চিঠিতে সুধু লেখা অথবা ফটো পাঠানো যেত। কিন্তু ইমেইলে অডিও, ভিডিও, পিডিএফ সহ সকল ধরনের ডিজিটাল ফাইল সহজেই পাঠানো যায়। আমাদের আজকের পোস্টে ইমেইল কি? সেরা কিছু মেইল সার্ভিস সম্পর্কে জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ই-মেইল কি?
ই-মেইল ইংরেজি ইল্কেট্রনিক মেইল শব্দের সংক্ষিপ্তরুপ। অর্থাৎ ই-মেইল হলো একটি ইলেকট্রনিক বার্তা যা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আদান-প্রদান করা যায়। ১৯৭১ সালে ইমেইল এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় রে টমলিনসন আরপানেট (ARPANET) ইউজ করে তার নিজের কাছে একটি টেস্ট ইমেইল সেন্ড করেন। পৃথিবীর প্রথম ইমেইল এর ভিতরে “QWERTYUIOP” লেখা বার্তা ছিল। ১৯৭১ সালে আবিষ্কার হওয়া ইমেইল ১৯৯৬ সালের মধ্যেই মোট পোস্টাল মেইলের সংখ্যা ক্রস করে ফেলে।
ই-মেইল যখন আবিষ্কার হয় তখন এর কিছু সিমাবদ্ধতা ছিল। যেমন ইমেইল সেন্ড এবং রিসিভ করার জন্য প্রাপক এবং প্রেরক দুইজনের একই সময় অনলাইন থাকতে হতো। নাহলে ইমেইল সেন্ড করা সম্ভব ছিল না। যদি বর্তমান সময়ে ইমেইল সেন্ড এবং রিসিভ করা হয় মেইল সার্ভারের মাধ্যমে। শুরুর দিকে মেইল সার্ভার ইউজ করা হতো না এবং মেইল ট্র্যান্সফার করার জন্য এফটিপি (FTP) ইউজ করা হলেও এখন এসএমটিপি (SMTP) প্রোটোকল ইউজ করা হয়। বর্তমানে মেইল সেন্ড করার পর তা মেইল সার্ভারে ষ্টোর হয় এবং প্রাপক যখন মেইল ক্লায়েন্ট ওপেন করে তখন উক্ত মেইল সার্ভার থেকে সরাসরি রিট্রাইভ হয়।
উইকিপিডিয়া কি? উইকিপিডিয়া কিভাবে কাজ করে?
একটি ই-মেইলে সাধারণত ২ টি অংশ থাকে। এগুলো হলো মেসেজ হেডার এবং মেসেজ বডি। অর্থাৎ মেসেজ হেডারে ইমেইলের সেন্ডার এবং রিসিভার সহ টেকনিক্যাল সকল তথ্য থাকে এবং মেসেজ বডিতে মূল বার্তা থাকে। প্রতিটি ইমেইল অ্যাড্রেসে সাধারণত তিনটি বিষয় থাকে। উদাহরণ দিয়ে বললে বিষয়টা পরিষ্কার বোঝা যাবে।
ধরুন আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস jhondoe@gmail.com অথবা jhondeo@facebook.com। এখন এখানে ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পাবো @ এই সাইনের দুই পাশে দুইটি অংশ আছে যার প্রথম অংশ ই-মেইল অ্যাকাউন্টের মালিকের নাম। ওপরদিকে @ চিহ্নর পরের অংশ হলো কোন ডোমেইন নেম। আর মাঝখানে যে @ সাইন আছে এটাকে বলা হয় “At sign” যা এসএমটিপির (SMTP) জন্য ইউজ করা হয় এবং এই চিহ্ন দ্বারা ইমেইল অ্যাড্রেস চেনা যায়।
ই-মেইল ইউজ করার জন্য আমরা নিজস্ব সার্ভার সেটআপ করেও ইউজ করতে পারবো অথবা ই-মেইল ক্লাইন্ট যেমন জিমেইল, ইয়াহু মেইল, আউটলুক ইত্যাদি ইউজ করতে পারবো। তাহলে চলুন সেরা কিছু ইমেইল সার্ভিস সম্পর্কে জেনে নেই।
সেরা ই-মেইল সার্ভিস
ই-মেইল সার্ভিস ইউজ করার জন্য বর্তমানে দুই প্রকার স্বীকৃত পদ্ধতি আছে। এগুলো হচ্ছে ই-মেইল ক্লাইন্ট এবং ওয়েবমেইল। ইমেইল ক্লাইন্ট কাজ করে রিমোট মেইল সার্ভার হিসেবে। ই-মেইল ক্লাইন্টের মধ্যে আউটলুক, থান্ডারবার্ড, অ্যাপল মেইল উল্লেখযোগ্য। ডেক্সটপ অ্যাপ বাদেও উক্ত সার্ভিস আপনি সরাসরি ব্রাউজার দিয়েও অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
অন্যদিকে ওয়েবমেয়াইল হলো ওয়েবব্রাউজার নির্ভর ইমেইল সার্ভিস। ওয়েবমেইল আপনি মোবাইল অ্যাপ থেকেও অ্যাক্সেস করতে পারবেন। কারণ ওয়েবমেইল ক্লাউড স্টোরেজ সিস্টেম ইউজ করে। এ কারনে সব ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক থেকে মেইল ইউজ করা যায়। এদের মধ্যে জিমেইল, ইয়াহু মেইল, AOL উল্লেখযোগ্য। তাহলে চলুন সেরা ইমেইল সার্ভিস গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
Gmail
জিমেইল একটি ওয়েবমেইল যা গুগলের একটি মেইল সার্ভিস। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেইল সার্ভিস প্রোভাইডার। এন্ড্রয়েড মোবাইল ইউজ করলে আপনার একটি জিমেইল অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন পরবে। কারণ গুগলের সকল সার্ভিস যেমন ইউটিউব, প্লে ষ্টোর ইউজ করতে জিমেইল অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন পড়বে।
তাছাড়া জিমেইলের ইউজার ইন্টারফেস অনেক সহজ। অন্যদিকে জিমেইল অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ ফ্রী এবং সাথে ১৫ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ (গুগল ড্রাইভ) পাওয়া যায় যা আপনার মেইল সার্ভার হিসেবে ইউজ হবে। আপনি চাইলে সেখানে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আপলোড দিয়ে রাখতে পারবেন।
Outlook
আউটলুক হলো মাইক্রোসফটের ইমেইল সার্ভিস যা একটি ইমেইল ক্লাইন্ট। এটি অনেকটা জিমেইলের মতই এবং অনেকেই একে “hotmail” নামে চেনে। মাইক্রোসফটের সকল সার্ভিস যেমন স্কাইপ, মাইক্রোসফট অফিস, উইন্ডোজ ওএস ইত্যাদি ইউজ করতে আউটলুক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন পরে।
এই অ্যাকাউন্ট একদম ফ্রী তে ক্রিয়েট করা যায় এবং ১৫ জিবি ফ্রী ক্লাউড স্টোরেজ পাওয়া যায়। আপনি আউটলুক ইউজ করে ব্রাউজার দ্বারা মেইল অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করতে পারবেন। যেহেতু আউটলুক একটি মেইল ক্লাইন্ট সেহেতু এখানে একসাথে অনেকগুলো মেইল অ্যাকাউন্ট ইউজ করতে পারবেন।
AOL
AOL একটি ফ্রী ওয়েবমেইল সার্ভিস। বর্তমান সময়ে অনেক অ্যামেরিকান এই মেইল সার্ভিস ইউজ করে। ২০১৫ সালে Verizon দ্বারা AOL কিনে নেওয়ার পর এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। অন্যান্য মেইল সার্ভিসের মতই AOL সার্ভিস প্রদান করলেও এর কিছু আলাদা ফিচার আছে। যেমন এর হোমপেজে রিসেন্ট নিউজ পাওয়া যায়। AOL কে আপনি IM বা ইনস্ট্যান্ট মেসেজ সার্ভিস হিসেবেও ইউজ করতে পারবেন। এছাড়া AOL আনলিমিটেড স্টোরেজ সার্ভিস প্রদান করে।
Yahoo! Mail
ইয়াহু মেইল অনেক পপুলার ই-মেইল সার্ভিস ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তার সেই অবস্থান আজকে তেমন না থাকলেও মেইল সার্ভিস প্রদানের দিক দিয়ে এটি এখনো ভালো অবস্থানে আছে। যাহোক, ইয়াহু মেইল একটি ওয়েবমেইল সার্ভিস। এখানে আপনি কাস্টম ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ বাদেও অন্যান্য থিম ইন্সটল করতে পারবেন। এছাড়া এখানে আপনি ১ টেরাবাইট পর্যন্ত ফ্রী স্টোরেজ পাবেন। সাধারণত বিভিন্ন ফাইল ট্র্যান্সফার করার জন্য ইয়াহু ব্যবহার করা লাভজনক। ইয়াহু মেইল ইনবক্সে সহজেই ফাইল বা ডকুমেন্ট সার্চ করা যায়। নির্দিষ্ট ফাইল খুঁজে পেতে এই সার্চ অনেক ভালো কাজ করে।
Thandarbird
থান্ডারবার্ড মজিলা ফায়ারফক্সের একটি মেইল সার্ভিস। এটি একটি ইমেইল ক্লাইন্ট যা সম্পূর্ণ ফ্রীতে ইউজ করা যায়। থান্ডারবার্ড এর সেটআপ এবং ইউজার ইন্টারফেস অনেক সহজ। এখানে ট্যাব আকারে মেইল ওপেন করা যায় এবং মেইল এক্সপেরিয়েন্স বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন এক্সটেনশন ইউজ করা যায়। সিকিউরড ই-মেইল ক্লাইন্ট হওয়ার কারণে থান্ডারবার্ড লিনাক্স ওএসে ডিফল্ট হিসেবে ইউজ করা হয়।
iCloud Mail
অ্যাপল সাধারণত তাদের সকল ডিভাইস একসাথে কানেক্ট করে ইউজ করতে উৎসাহিত করে। এতে একি এনভায়রনমেন্ট তৈরি হয় যাতে কেবল তাদের প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে। এর ধারাবাহিকতায় তাদের সকল ডিভাইস একে অপরের সাথে কানেক্টেড রাখতে তারা iCloud Mail নামক ওয়েব মেইল সার্ভিসের প্রবর্তন করে।
iCloud Mail আপনার সকল অ্যাপল প্রোডাক্ট একই সাথে কানেক্ট করে যেখানে আপনি যে কোন ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইস অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এছাড়া তারা ৫ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ দেয় যেখানে আপনার সকল ডিভাইসের সাথে স্পেস শেয়ার করে। অর্থাৎ আপনার প্রতিটি ডিভাইসের ডাটা ওই ৫ জিবির মধ্যে ষ্টোর হবে।
IT Nut Hosting এর ওয়েব-মেইল সার্ভিস
এখন আপনি যদি ফাইল আপলোড দিয়ে স্পেস পূর্ণ করেন তাহলে ঝামেলায় পরে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে টাকা দিয়ে স্পেস বৃদ্ধি করে নিতে হবে। এখানে আপনি মাসিক 0.99$ থেকে 9.99$ পর্যন্ত বিভিন্ন প্ল্যান পাবেন। iCloud Mail ইউজ করা অনেক সহজ। এখানে আপনি VIP নামক লেবেল অ্যাড করে নির্দিষ্ট মেইলকে আলাদা ট্যাবে নিতে পারবেন।
উপরে যে যে ইমেইল সার্ভিস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তাদের সবগুলোই সেরা। এখানে প্রতিটার আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আশাকরি আর্টিকেল পরে আপনি অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন। লেখাটি সম্প্রকে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ত বক্সে জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।