ইভ্যালি কিভাবে তৈরি হলো? ইভ্যালি কত বড়?

ই-কমার্স বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি বিষয়। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন আমাদের যতগুলো সুবিধা দিয়েছে তার মধ্যে আজকের ই-কমার্স অন্যতম। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও বিস্তার বর্তমান পৃথিবীতে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। খুব বেশি না, মাত্র ৫০ বছর আগেও কারো সাথে যোগাযোগের জন্য চিঠির উপর নির্ভর থাকতে হতো। যার জন্য কয়েক মাস পর্যন্ত চলে যেত। কিন্তু ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আবিষ্কারকার সে ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। এখন পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের মানুষের সাথে ম্যাসেজিং, ভিডিও কিংবা অডিও যে কোন মাধ্যমে যুক্ত হওয়া মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার।

বর্তমান বিশ্বে যে এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তার পিছনে কিন্তু ইন্টারনেটের অনেক বড় অবদান রয়েছে। আজকের পৃথিবীতে রাজত্ব করছে ইন্টারনেট। আর এ ইন্টারনেটের সুযোগকে কাজে লাগিয়েই জন্ম নিয়েছে ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স এর মত ধারণা।

ই-কমার্স হলো মূলত অনলাইন ব্যবসা। এ অনলাইন ব্যবসা সাধারণত এক ধরনের আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরী করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এজন্য একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ীকে ওয়েবসাইটে তার পণ্যের তালিকাভুক্ত করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি করতে হয়।

বর্তমানে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের নির্ভরশীলতার কারণে মানুষ খুব সহজেই বিভিন্ন ই-কমার্স মার্কেট থেকে তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিনতে পারছেন। কোন ধরনের ভোগান্তির ছাড়া ঘরে বসেই পণ্য অর্ডার দেয়া যায় বলে ই-কমার্স বর্তমানে অনেক অনেক জনপ্রিয়।

এখনকার সময়ের প্রায় সব কাজেই অনলাইনে হচ্ছে। এখন অনলাইন ব্যাংকিং, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তাই অনলাইনে কেনাকাটার পর পেমেন্ট নিয়েও তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।

কোনো প্রকার পরিশ্রম ছাড়াই অনলাইনে বাজার করা, আকর্ষণীয় মূল্য ছাড় ও স্বল্প সময়ে পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার কারণে এখন অনেকেই ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছে। আর গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনায় প্রতিনিয়তই বাজারে আসছে নতুন নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

ই-কর্মাস বিজনেস শুরু করার আগে যা জানা জরুরী

ই-কমার্সের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশও কিন্তু পিছিয়ে নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এবং মাসিক ৮ কোটি সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। তাই ই-কমার্স সাইট গুলোর জন্য বাংলাদেশসহ অনেক বড় একটি বাজার। এই কারণেই বাংলাদেশে দেশীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ই কমার্স প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে দারাজ, ইভ্যালি, আজকের ডিল, প্রিয় সপ ইত্যাদি অন্যতম। বর্তমানে এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি মাসে প্রায় কয়েক শত কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা করছে। এ থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা কতটা ব্যাপক।

ইভ্যালি কিভাবে তৈরি হলো? 

ইভ্যালি কিভাবে তৈরি হলো?

বাংলাদেশের বেশ কয়েক বছর আগেই ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হলেও ২০১৮-১৯ সালের দিকে এসে ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। শুরু থেকেই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স এর সাথে যুক্ত থাকলেও বর্তমান ই-কমার্স এর দুনিয়ায় ইভ্যালি সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম। বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার, মূল্য ছাড়াও ব্যবসায়ীক ক্যাম্পেইনের কারণে ইভ্যালি খুব দ্রুতই হাজারো গ্রাহকের মন জয় করে নিয়েছে।

“ট্রান্সফর্মিং লাইফ টু ডিজিটাল” স্লোগান নিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসাবে হাতে-কলমে ইভ্যালির যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই ইভ্যালি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পাশাপাশি, অনেক ধরনের গ্রাহকসেবা কেও অনলাইন প্লাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। গতানুগতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে ইভ্যালির ব্যবসায়িক আইডিয়াটি অনেকটাই আলাদা ও গ্রাহকবান্ধব হওয়ায় দ্রুতই এর নাম অন্যান্য মার্কেটপ্লেসগুলো ছাপিয়ে আলোচনায় আসে।

বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই বেশ কয়েকটি ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস থাকলেও খুব কম সময়ে ইভ্যালির মত এত সাড়া কেউ ফেলতে পারেনি। এর পেছনে মূলত কাজ করছে দক্ষ পরিচালনা ও অসাধারণ ব্যবসায়িক আইডিয়া। ইভ্যালি মার্কেটপ্লেস এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসেবে শুরু থেকেই এর সাথে যুক্ত আছেন মোহাম্মোদ রাসেল। যিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ কমপ্লিট করেছেন। তার অসাধারন বুদ্ধিমত্তা ও ব্যাবসায়িক নীতির কারণে ইভ্যালি অল্প সময়ে এতদূর এগিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।

মূলত ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্বের অনেক বড় বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কেনাকাটা বাড়তে থাকে। বিশ্বের শীর্ষ ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস যেমন অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট ও আলিবাবার মত প্রতিষ্ঠানগুলি এসময় প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি ডলারের পণ্য বিক্রয় শুরু করে। বাংলাদেশেও ই-কমার্স বিজনেস এর এরুপ সম্ভাবনাময় বাজার ধরার জন্যই কিন্তু ইভ্যালির যাত্রা।

তবে বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই দারাজ, ওথোবার মতো প্রতিষ্ঠানে থাকলেও ই-কমার্স বিজনেসে দেয় তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। এর অন্যতম কারণ হলো বাজারের চেয়ে পণ্যের মূল্য বেশি, অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ, ডেলিভারি সময় বেশি লাগানো ও ত্রুটিযুক্ত পণ্য। আর এসব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে ও অনেক কম মূল্যে গ্রাহকদের মানসম্মত পণ্য সরবরাহ ও সেবা দানের জন্য ইভ্যালির জন্ম হয়েছে।

ইভ্যালি কত বড়?

প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছর বয়স হলেও এই অল্প সময়ের মধ্যেই ইভ্যালি অনেক নামিদামি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহক সেবা ও পণ্য ডেলিভারি দিক থেকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে ই-কমার্স দুনিয়ায় ইভ্যালি এখন একটি সাফল্যের নাম। বর্তমানে এই ই-কমার্স সাইটটিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার ধরনের এবং দুই লাখেরও বেশি পণ্য ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও এতে ১০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন। যা ইভ্যালির পণ্যের বৈচিত্রকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

এত পণ্য ও সেবা আগে কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এদেশে নিশ্চিত করতে পারেনি। আর প্রতিনিয়ত এসব পণ্য ও সেবার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। তাই ক্রেতাদের কাছে খুব কম সুযোগ রয়েছে পণ্য ও সেবা নেই বলে অভিযোগ করার। অল্প সময়ের মধ্যেই এত বেশি পরিমাণ পণ্য ও সেবা নিশ্চিত করে ইভ্যালি অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে একপ্রকার চমকে দিয়েছে।

আগে দেখা যেত অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে চাহিদা মোতাবেক পণ্য ও সেবা পাওয়া যায় না। কিন্তু ইভ্যালি আসার পর সে ধারনাটা পাল্টে গেছে। এখন এখান থেকে ব্যাগ, জুতা, গয়না, পোশাক, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, কসমেটিকস খাদ্যপণ্য সহ নানা ধরনের প্রায় সকল পণ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সিমেন্ট, ইলেকট্রিক্যাল ফিটিংস এবং হার্ডওয়্যারের পণ্য ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। তবে মজার ব্যাপার হলো এসবের কোনটির দামই কিন্তু বাজারের মূল্যের চেয়ে বেশি নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের ক্যাশ ভাউচার, ক্যাশ ব্যাক দেয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে গতানুগতিক দামের চেয়ে অনেক কম দামেই পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া ইভ্যালিতে দেয়া বিভিন্ন গ্রাহক সেবার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং, বিউটি কেয়ার, ক্যাটারিং, ডে-কেয়ার, আইটি, স্বাস্থ্যসেবা, ভ্রমণ ও ভিসা বিষয়ক পরামর্শ এবং টিউশন সেবার মতো আরো শতাধিক সেবা। মূলত কেনাকাটায় অসাধারণ ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা দেয়াই ইভ্যালির লক্ষ্য।

বর্তমানে ইভ্যালিতে মাসে প্রায় ১৬ থেকে ২০ কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হয়। বাৎসরিক হিসাবে যা দেড়শ থেকে দুইশ কোটি টাকা পর্যন্ত দাঁড়ায়। এছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় এক হাজারেরও বেশি পণ্য অর্ডার জমা পড়ে। যার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে ইভ্যালি। প্রতিনিয়তই এত বেশি পরিমাণ পণ্যের অর্ডার, ডেলিভারি ও হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করতে গিয়ে ইভ্যালি কে অনেক হিমশিম খেতে হয়। তবে ইভ্যালি গ্রাহক সেবা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রতিদিন একসাথে কয়েক হাজার মানুষকে সেবা দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে ইভ্যালি।

অল ইন অল ই-কমার্স সলিউশন

কিন্তু এত সব এর পরেও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই গেছে। এগুলোর মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে দেরি, ডেলিভারিকালীন সময়ে পণ্যের মান খারাপ হয়ে যাওয়া, পণ্যের অর্ডার ক্যানসেল করার পর টাকা রিটার্ন পেতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি অন্যতম। তবে এসব সমস্যার পরেও বিভিন্ন অফার ও কম দামে গুণগত পণ্য নিশ্চিত করার জন্য ইভ্যালির সবার কাছেই অন্যরকম গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।

Leave a Reply