ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর এর বিশালতা ও নান্দনিকতার জন্য বিশ্বব্যাপি অনেক জনপ্রিয়। এই সেক্টরে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষ তাদের নিজেদের জীবন যেমন সফল করছে তেমনি আরও নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার চাহিদা কমে গেলেও নতুন অনেক ক্ষেত্র চালু হচ্ছে।
আমাদের আজকের লেখায় আমরা ২০২৪ সালে কোন ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার চাহিদা বেশি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এই সকল বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে আপনি অনলাইন ও অফলাইনে সফলতা লাভ করতে পারবেন।
২০২৪ সালে কোন ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার চাহিদা বেশি?
নিচে ২০২৪ সালে কোন ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার চাহিদা বেশি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ডাটা অ্যানালাইসিস ও ভিজুয়ালাইজেশন
ডাটা কে বলা হয় এই যুগের গোল্ড। বর্তমান সময়ে যারা ডাটাকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারে তারা সকল ক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইনে বিভিন্ন বিজনেস সহ অফলাইনে অনেক ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডাটার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। মোটকথা ব্যাবসায়িক সফলতার জন্য আপনাকে ডাটার সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।
ডেটা এনালাইসিস কি? ডেটা এনালিস্ট কে?
২০২৪ সালে আপনি যদি সঠিকভাবে ডাটা অ্যানালাইসিস করে তা সহজ করে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে কম্পিটিশনে অনেক এগিয়ে থাকবেন। বিশেষ করে ডাটা অ্যানালাইসিস অ্যাপ বা সার্ভিস যেমন এক্সেল, পাওয়ার বিআই ইত্যাদি ভালো করে ব্যবহার করে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং
মে মাসের ১৪ তারিখ ২০২৪ সালে ওপেন এআই চ্যাটজিপিটি ৪ এর আপডেট ভার্সন “o” বা “Omni” রিলিজ করেছে। এটি পুরোপুরি মানুষের মত করে ৩২০ মিলিসেকেন্ডে রেসপন্স করতে পারে। এটি টেক্সট এর পাশাপাশি অডিও ও ভিডিও ইনপুট নিয়ে রিয়েল টাইম ডাটা প্রসেস করতে পারে। অর্থাৎ এখন থেকে চ্যাটজিপিটি দিয়ে রিয়েল টাইম কনভারসেশন সহ আরও অনেক কিছুই করতে পারবেন।
তাহলে চিন্তা করে দেখুন আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স কত অ্যাডভানস হয়ে উঠেছে। এআই যত উন্নত হচ্ছে এই সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আপনি যদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং সম্পর্কে দক্ষ হন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি সরাসরি অনেক প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস দিতে পারবেন।
পাশাপাশি নিজে স্টার্ট-আপ হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠান প্রতিস্থা করতে পারবেন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন ২০২২ সাল থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স টেকনোলজি দুনিয়া দখল করে নিয়েছে। পাশাপাশি এআই সম্পর্কিত দক্ষতার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পেতেই থাকবে।
ফুল স্টাক ওয়েব ডেভেলপার
ইন্টারনেট যতদিন আছে ওয়েবসাইট ততদিন থাকবে। এর এই ওয়েবসাইট তৈরি করতে প্রয়োজন হয় ডেভেলপারের। তবে সময়ের সাথে সাথে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এইতো কয়েক বছর পূর্বেও ফ্রন্ট এন্ড এবং ব্যাক এন্ড ডেভেলপারদের আলাদা আলাদা করে বিভাজন করা হত।
তবে টেকনোলজির উন্নয়নের কারণে বর্তমানে ডেভেলপমেন্ট শেখা যেমন সহজ হয়েছে তেমনি অনেক টুলের ইউজের কারণে কাজ সহজ হয়েছে। যে কারণে বর্তমানে আলাদা আলাদাভাবে ফ্রন্ট এন্ড ও ব্যাক এন্ড এর চাহিদা কমার পাশাপাশি যারা দুইটাই পারে অর্থাৎ ফুল স্টাক ডেভেলপার তাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে ফুল স্টাক এবং মার্ন স্ট্যাক ডেভেলপারের রাজত্ব চলছে। ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ফুল স্টাক ডেভেলপমেন্ট কম্পিটিটিভ কিন্তু উচ্চমূল্যের দক্ষতা।
কনটেন্ট ক্রিয়েশন
ইন্টারনেটে কন্টেন্টের কোনো বিকল্প নেই। অডিও, টেক্সট বা ভিডিও যাই বলেন না কেন এগুলো ছাড়া ইন্টারনেটের কোনো অস্তিত্ব নেই। যাই হোক, ২০২৪ সালে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে আপনি কন্টেন্ট ক্রিয়েশন দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনি এই সেক্টরে যত বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন আপনার মূল্য তত বৃদ্ধি পাবে।
আজকাল কন্টেন্ট মনিটাইজেশন করা অনেক সহজ হয়ে গেছে যে কারণে ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি নিজের কন্টেন্ট থেকেও আয় করতে পারবেন। মান্ধাতার আমলের কন্টেন্ট তৈরি করার পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আসলেও অভিজ্ঞ ক্রিয়েটরদের কাছে নতুন কিছু অ্যাডপ্ট করে নেওয়া সহজ। মোটকথা, আপনি রাইটার, এডিটর, ভিডিওগ্রাফার, কপিরাইটার ও এআই ইউজ করে যে কোন ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করে তা দিয়ে আয় করতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং
সময়ের সাথে সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যদি বলা হয় ভবিষ্যৎ টেকনোলজি দুনিয়ায় কোন দক্ষতার চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে তবে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক এগিয়ে থাকবে। কারণ আপনি অনলাইনে বিজনেস করতে চাইলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্য নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
এর সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাইতে পারবেন। এতে যেমন সেল বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষতা থাকলে আপনি নিজের মার্কেটিং করার পাশাপাশি সার্ভিস দিতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন আপওয়ার্ক ও ফাইবারে প্রচুর পরিমাণে ডিজিটাল মার্কেটিং কাজ পাওয়া যায়।
সাইবার সিকিউরিটি
সাইবার সিকিউরিটি একটি এভারগ্রীন দক্ষতা। টেকনোলজি যতদিন থাকবে এই সেক্টর ততদিন থাকবে। মানুষ যত বেশি প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিজ্ঞ হচ্ছে সিকিউরিটি নিয়ে উদ্বিগ্নতা সমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই ডিজিটাল ডিভাইস আছে যা অসতর্ক ব্যবহারের কারণে সিকিউরিটি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিষ্ঠান, বিজনেস, পার্সোনাল লাইফ ইত্যাদি রক্ষা করার জন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটির প্রয়োজন।
প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সাইবার সিকিউরিটির সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে। আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অথবা নিজের বিজনেস অথবা কোন কোম্পানিতে চাকরি করার জন্য সাইবার সিকিউরিটিকে বেছে নিতে পারেন। এতে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না।
অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
বর্তমান সময় অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের স্বর্ণযুগ চলছে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস এর পাশাপাশি ওয়েব অ্যাপ তৈরি করার ধুম পড়ে গেছে। অ্যাপের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে স্মার্টফোন বৃদ্ধি পাওয়া।
আমরা সকলেই আমাদের জীবন-যাপনের বেশির ভাগ সময় ফোনের মাধ্যমে কাটাই। যে কারণে স্মার্টফোন ভিত্তিক অ্যাপ তৈরি করার প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। তো ক্যারিয়ার হিসেবে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট অনেক উচ্চমূল্যের। এখানে সালারি যেমন বেশি তেমনি ক্রিয়েটিভ দক্ষতা প্রকাশ করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়া যায়। অন্যদিকে এটি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মতই একটি সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি ক্ষেত্র।
আপনি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার এর মত অ্যাপের স্ট্যাটিস্টিক্স যদি দেখেন তাহলে ধারণা পাবেন এগুলো কি পরিমাণ ভিজিটর পায়। প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর যেখানেই দেখবেন প্রায় সকল ধরনের অ্যাপ পাওয়া যায়। আপনি যদি এই ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে ক্যারিয়ার নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
ভিডিও এডিটিং
ভিডিও এডিটিং শুরু থেকেই অনেক ডিমান্ডফুল একটি সেক্টর। এখানে টুলের সাহায্য নিয়ে আমরা আমাদের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি। তাছাড়া এখন কন্টেন্ট ক্রিয়েশন অনেক হাইভ্যালু সেক্টর যেখানে ভিডিও এডিটিং এর কোন বিকল্প নেই। তো ভিডিও এডিটিং দক্ষতা অর্জন করে আপনি একাধারে ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ এবং প্রোডাকশন হাউজে জব করার পাশাপাশি নিজের কনটেন্ট নিজে মনিটাইজেশন করতে পারবেন।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে ভিডিও মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৬% থেকেও বেশি লিড সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাছাড়া ভিডিও মার্কেটিং পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ সালে এই সেক্টরে ৯২.৩ বিলিয়নের মত ইনভেস্টমেন্ট আসবে।
ভিডিও এডিটিং কি? কিভাবে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হবেন?
সেলফ ব্রান্ডিং
ইন্টারনেট জগতে সেলফ ব্রান্ডিং এর কোন বিকল্প নেই। আপনি কোন বিষয়ে যতই দক্ষ হন তা থেকে যদি ইনকাম না হয় তাহলে সেই দক্ষতার কোন মূল্য নেই। এই কঠিন সত্য যখন বুঝতে পারবেন তখন যেন পস্তাতে না হয় সে জন্য আপনাকে অবশ্যই সেলফ ব্রান্ডিং সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যত ভালো করে নিজের স্কিল এবং সার্ভিস মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন আপনি তত বেশি সফলতা পাবেন। মোটকথা সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি সেলফ ব্রান্ডিং এ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
কমিউনিকেশন এবং কোলাবেরেশন
কমিউনিকেশন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কথা বলতে পারাকে আমরা কখনোই একটি দক্ষতা হিসেবে মেনে নেই না। তবে আমাদের জীবনের সব থেকে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হচ্ছে কমিউনিকেশন।
আপনি কথার মাধ্যমে কোন মানুষের কাছে খারাপ এবং ভালো উভয় হতে পারবেন। মানুষ আপনাকে কথা বলার উপরে ভিত্তি করে আপনার ব্যক্তিত্ব বিচার করবে। যাইহোক, অনলাইনে ইনকাম করতে চাইলে অথবা নিজেকে প্রযুক্তি তথা সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে কমিউনিকেশন সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
উপরিউক্ত আলোচনায় ২০২৪ সালে কোন ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার চাহিদা বেশি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে প্রযুক্তি দুনিয়ায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আপনাকে কোন কোন ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি অনেক নতুন বিষয় জানতে পেরেছেন।