কম্পিউটার ভাইরাস অনেক মারাত্মক একটি বিষয়। মানব দেহে অসুখ সৃষ্টি করা ভাইরাসের মত না হলেও এটি কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য ক্যানসার সমতুল্য। কম্পিউটার ভাইরাস মূলত ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম। যা সিস্টেমে প্রবেশ করার পর লুকিয়ে থাকতে পারে। এই কারণে স্বাভাবিকভাবে আপনি আপনার সিস্টেম ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা টের পাবেন না। নিচে কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত কি না জানার ১০ কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত কি না জানার ১০ কৌশল
আপনার কম্পিউটারে কোন প্রকারের ম্যালওয়্যার, ট্রোজান, র্যানসমওয়্যার, অ্যাডওয়ার তথা কোন ভাইরাস অ্যাটাক করেছে কিনা তা নিচে বর্ণনা করা কৌশলের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
ইন্টারনেট, সিপিইউ ও হার্ডডিস্ক অ্যাক্টিভিটি বেড়ে যাওয়া
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হলে তা গোপনে হার্ডডিস্ক ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশেষ করে অতিরিক্ত কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহার করার কারণে হার্ডডিস্ক এবং সিপিইউ ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। আবার বেশি বেশি ইন্টারনেট ইউজ করার কারণে অতিরিক্ত ডাটা খরচ হয়।
মোটকথা, কম্পিউটার ইউজ করার সময় যদি দেখেন যে আপনার সিপিইউ, হার্ডডিস্ক অথবা ইন্টারনেট অতিরিক্ত ইউজ হচ্ছে তাহলে ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছে নাকি তা চেক করে দেখতে হবে। কম্পিউটারের টাস্ক ম্যানেজমেন্ট অপশন থেকে রিসোর্স মনিটর অপশনে গিয়ে কোন প্রকারের অপ্রয়োজনীয় অ্যাক্টিভিটি আছে নাকি তা দেখতে পারবেন।
কম্পিউটার স্লো হওয়া
মোবাইল এবং কম্পিউটার এই দুইটি ডিভাইস যদি স্লো কাজ করে তাহলে তার থেকে বিরক্তিকর আর কিছুই নেই। তবে মডার্ন কম্পিউটার গুলোতে অত্যাধুনিক পদ্ধতির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে তা অনেক দ্রুত কাজ করে। এতে আমাদের দ্রুততর ডিভাইস ইউজ করার অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে লেটেস্ট হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার থাকা সত্ত্বেও যদি কম্পিউটার অনেক ধীরগতিতে কাজ করে তাহলে ধরে নিতে হবে ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছে।
অর্থাৎ কোন কম্পিউটারে যদি ম্যালওয়্যার অথবা কোন ভাইরাস অ্যাটাক হয় তাহলে উক্ত ভাইরাস ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক রিসোর্স যেমন র্যাম, প্রোসেসিং পাওয়ার, স্টোরেজ ইত্যাদি ব্যবহার করে। সবসময় এই সকল প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ব্যস্ত থাকার ফলে ডিভাইসে অন্যান্য সাধারণ কাজ করা যায় না। সর্বোপরি, যখন দেখবেন আপনার কম্পিউটার স্বাভাবিকের থেকে ধীর গতিতে কাজ করছে তখন অবশ্যই ভাইরাস আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে।
বারবার ক্রাশ করা
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কারণে সব থেকে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বার বার ইরর মেসেজ সহ ক্রাশ করা তার মধ্যে অন্যতম। যেহেতু একটি অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারে উপস্থিত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে পরিচালিত হয় সেহেতু এর কোন ব্যাঘাত ঘটলে সিস্টেম সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না।
যেমন আপনি ইন্টারনেট চালানোর সময় যদি আপনার মডেম বার বার ডিসকানেক্ট হয় অথবা হার্ডডিস্ক বার বার ছেড়ে দেয় তাহলে কেমন লাগবে? অবশ্যই বিরক্তিকর লাগবে। অন্যদিকে, হার্ডডিস্ক বা এই জাতীয় হার্ডওয়্যার সহ অপারেটিং সিস্টেম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সঠিক ভাবে কাজ না করতে পারলে সিস্টেম ক্রাশ করবে। আপনার সিস্টেম যদি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে নির্দ্বিধায় আপনি এই ধরনের সমস্যায় পরবেন।
ফাইল ডিলিট বা হারিয়ে যাওয়া
হার্ডডিস্কে থাকা ফাইল ডিলিট হওয়া অথবা হারিয়ে যাওয়া একটি অস্বাভাবিক বিষয়। কারণ আপনি কোনো কমান্ড না দিলে কম্পিউটার কোনো ফাইল মোডিফাই করতে পারে না। তবে সিস্টেমে ভাইরাস অ্যাটাক করলে তা ইউজার রোল মডিফাই করে স্বয়ংক্রিয় কোডের মাধ্যমে ফাইল ও ফোল্ডার ক্রিয়েট, ডিলিট ও মোডিফাই করার কমান্ড দেয়। এতে আপনি আপনার হার্ডডিস্কে নতুন ফাইল বা ফোল্ডার দেখা সহ ফোল্ডারের ভেতরে আরও ফোল্ডার দেখতে পাবেন।
অনেক ক্ষেত্রে এই ফাইল বা ফোল্ডার আপনি সরাসরি দেখতে পাবেন না কারণ সেগুলো হাইড করা থাকে। বর্তমানে প্রচলিত র্যানসমওয়্যার ভাইরাস হার্ডডিস্কের ফাইল এনক্রিপ্ট করে লক করে দিতে পারে। এতে উক্ত হ্যাকারকে যদি আপনি তার চাহিদা মত অর্থ না প্রদান করেন তাহলে সে ডিক্রিপ্ট করার কি দিবে না। এতে আপনি আপনার সকল ফাইল চিরতরে হারিয়ে ফেলবেন। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন কম্পিউটার ভাইরাস অ্যাটাক হলে আপনার ক্ষতি ছাড়া কোন প্রকারের লাভ হবে না। সর্বোপরি আপনার হার্ডডিস্কে যখন কোন ধরনের সন্দেহজনক অ্যাক্টিভিটি দেখতে পাবেন তখন দ্রুত সিস্টেম ভাইরাস ক্লিন করে নিবেন।
নতুন ব্রাউজার টুলবার অ্যাড হওয়া
এমন অনেক ভাইরাস আছে যা ব্রাউজারে তাদের তৈরি করা টুলবার অ্যাড করে দেয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কোনো ব্রাউজারে এই ধরনের টুলবার থাকে না। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের ব্রাউজারগুলোয় কোনো অতিরিক্ত টুলবার প্রয়োজন পড়ে না। এই কারণে যখনই আপনার সিস্টেমে ব্রাউজারের মধ্যে এই ধরনের কোন নতুন টুলবার বা নতুন কোন সন্দেহজনক অপশন দেখতে পাবেন তখন ধরে নিবেন সিস্টেম ভাইরাস আক্রান্ত।
এই ধরনের টুলবার ভাইরাস সচরাচর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড দেওার মাধ্যমে সিস্টেমে প্রবেশ করে। তো অনলাইনে কোন আনঅফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাইরাস বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন।
হার্ডডিস্ক এনক্রিপ্ট হয়ে যাওয়া
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি র্যানসমওয়্যার এর প্রধান কাজ হচ্ছে কোন কিছু কিডন্যাপ করে তার বিনিময়ে অর্থ দাবি করা। সাম্প্রতিক সময়ে পুরো অনলাইন দুনিয়ায় এই বিষয় নিয়ে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা ও ইউটিউবে শেয়ার করা ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় এটি অনেক বড় একটি আতঙ্কের নাম। কারণ এই ভাইরাস আক্রান্ত করার পর হার্ডডিস্কে থাকা সকল ধরনের ফাইল এনক্রিপ্ট করে তার এক্সটেনশন পরিবর্তন করে দেয়।
এখন হ্যাকার যদি এই ফাইল গুলো ডিক্রিপ্ট করার কি আপনাকে না দেয় আহলে কোন ভাবেই সেই ফাইল রিকভার করা সম্ভব নয়। এতে আপনি যেমন সকল ধরনের ফাইল হারাচ্ছেন তেমনি অনেক বড় লসের শিকার হচ্ছেন। মোটকথা যখন দেখবেন যে আপনার স্টোরেজের ফাইল গুলো সব পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং আপনি সেগুলো আর ব্যবহার করতে পারছেন না তখন বুঝে নিবেন আপনার সিস্টেম ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।
অপরিচিত সফটওয়্যার ইন্সটল
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রধান কাজ হচ্ছে সিস্টেমে ক্ষতিকর সফটওয়্যার অথবা কোড প্রবেশ করানো। কারণ এতে সিস্টেমের ভেতরে থেকে কম্পিউটারের ক্ষতি করা আরও সহজ হয়। তো আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিনা তা বোঝার জন্য সিস্টেমে আপনার অজান্তে কোন সফটওয়্যার ইন্সটল আছে কিনা তা চেক করে নিতে পারেন।
সবসময় যে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে এই সকল ইন্সটল করা সফটওয়্যার দেখতে পাবেন এমন কোনো কথা নেই। আপনাকে ম্যানুয়ালি খুঁজতে হবে অথবা কোনো টুলের সাহায্য নিতে হবে। তবে আপনি সিস্টেমের টাস্ক ম্যানেজমেন্ট অপশন থেকে প্রসেস চেক করে ধারণা নিতে পারবেন। এখানে অ্যাক্টিভিটি দেখেও অনেক কিছু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
বিরক্তিকর পপআপ অ্যাড আসা
কম্পিউটার এবং মোবাইল চালানোর সময় যখন পপআপ আসে তা অনেক বিরক্তির সৃষ্টি করে। এতে স্বাভাবিক ডিভাইস ইউজ করা যেমন কষ্টকর হয় তেমনি বারবার পপআপ উইন্ডো কেটে দিতেও বিরক্ত লাগে। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সাথে সাথে পুরো উইন্ডো পপআপ অ্যাড দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। সর্বোপরি পপআপ ভাইরাস স্বাভাবিক ডিভাইস ইউজ করাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। যখন আপনার ডিভাইসে এই ধরনের সমস্যা দেখবেন তখন বুজতে পারবেন যে কম্পিউটার অ্যাডওয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
কম্পিউটার অ্যাক্সেস করতে না পারা
অনেক সময় কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তা সম্পূর্ণরূপে লকড হয়ে যায়। অর্থাৎ দেখা যাবে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর আপনি কিছু কিছু ফোল্ডার, ফাইল, সেটিং ইত্যাদি অ্যাক্সেস করতে পারছেন। সেখানে আপনাকে কোন ইরর দেখাচ্ছে অথবা অ্যাক্সেস ডিনাই করে দিচ্ছে। তবে বেশিরভাগ সময় পুরো সিস্টেম লক করে দেওয়া থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত থাকবেন যে ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছে এবং নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম দিতে হবে।
সেরা ৫ টি ফ্রি এন্টিভাইরাস – বেস্ট সিকিউর এন্টিভাইরাস
এন্টিভাইরাস ডিজেবল হয়ে যাওয়া
কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করার কাজ করে এন্টিভাইরাস। কিন্তু আপনার কম্পিউটারে যদি এই প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে ভাইরাস নির্দ্বিধায় অনুপ্রবেশ করতে পারবে। বর্তমানে সিস্টেমে ভাইরাস প্রবেশ করানোর জন্য হ্যাকাররা প্রথমে এন্টিভাইরাস ডিজেবল করে নেই। যখন আপনি আপনার সিস্টেমে দেখবেন যে এন্টিভাইরাস বন্ধ হয়ে আছে বা কাজ করছে না তখন সিউর হয়ে নিবেন যে ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছে। এবং পরবর্তীতে আরও বড় ধরনের অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উপরিউক্ত আলোচনায় একটি কম্পিউটার সিস্টেম ভাইরাস আক্রান্ত হলে কি কি উপসর্গ প্রদর্শন করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত কি না জানার ১০ কৌশল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।