পিন্টারেস্ট কি?
পিন্টারেস্ট কি? পিন্টারেস্ট কত বড়? পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস

পিন্টারেস্ট কি? পিন্টারেস্ট কত বড়? পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস

সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো তৈরি হয় ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির সাথে কানেক্টেড থাকতে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ১৯ শতকের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পূর্বের চেয়ে সহজে নিজের অভিজ্ঞতা বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে। অডিও এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। 

ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আমাদের আরও বেশি সোশ্যাল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারছি, বিপদে-আপদে সহযোগিতা করতে পারছি। আমাদের আজকের লেখায় আমরা একটি ভিন্নধর্মী কিন্তু উপকারী সোশ্যাল মিডিয়া পিন্টারেস্ট সম্পর্কে জানবো। তো চলুন জেনে আসি পিন্টারেস্ট কি?পিন্টারেস্ট কত বড়? আয়ের উৎস কি কি এবং পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস।  

পিন্টারেস্ট কি? 

পিন্টারেস্ট একটি জনপ্রিয় ইমেজ শেয়ারিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক। অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মত এখানেও আপনি ইমেজ, ভিডিও, লিংক, অ্যানিমেশন ইত্যাদি পোস্ট করতে পারবেন। পিন্টারেস্ট তার কাজের ধরনের দিক থেকে অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকে আলাদা।

এখানে আপনি নিজের ইচ্ছে মত পোস্ট সেভ করে রাখতে পারবেন। অর্থাৎ পিন্টারেস্ট আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় অনলাইন প্রোডাক্ট ষ্টোর করে রাখার সুবিধা দেয়। ডিজিটাল পণ্য যেমন মডার্ন আর্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইন কনসেপ্ট, পার্সোনাল প্রোডাক্ট ইত্যাদি মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন।

আপনি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পিন্টারেস্টের সকল সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। পপুলারিটির দিক দিয়ে পিন্টারেস্ট টপ ১০ সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের মধ্যে অন্যতম। এখানে পারসনের থেকে সার্ভিস কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরো সাইট একদম ফ্রী এবং কোন ফিচার ইউজ করার জন্য আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না।

টেলিগ্রাম কিভাবে তৈরি হলো?

আপনি আপনার প্রোফাইলে বোর্ড তৈরি করে সেখানে আপনার সার্ভিস পিন আকারে সাজিয়ে রাখতে পারবেন। ব্যপারটা অনেকটা স্কুল কলেজের নোটিশ বোর্ডের মত কাজ করে। একটি পিন আপনি একদম নিজের মত করে সাজাতে পারবেন।

টাইটেল এবং ডেসক্রিপশন ভালো করে অপ্টিমাইজ করতে পারলে আপনার পিন পিন্টারেস্ট বাদেও গুগলে র‍্যাঙ্ক করবে। বিশেষ করে গুগলে র‍্যাঙ্ক করার ক্ষেত্রে ফেসবুকের পরেই পিন্টারেস্ট স্থান করে নিয়েছে। মোটকথা পিন্টারেস্ট আপনার এবং আপনার সার্ভিসের মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং এর জন্য পারফেক্ট স্থান।  

পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস

পিন্টারেস্ট তৈরির ইতিহাস শুরু করার আগে আমাদের এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো হবে। পিন্টারেস্টের প্রতিষ্ঠাতা বেন সিলবারমান শিক্ষাজীবন শেষ করেন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট হিসেবে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন ডাক্তার হওয়া তার মনের ইচ্ছা না, সে জীবনে অন্যকিছু করতে চায় যা তাকে আনন্দ দেবে। এরপর নিজেকে কন্সাল্টিং পেশায় নিজুক্ত করেন। কিন্তু এখানেও তার একদম মন বসছিলো না। তখন তিনি সিলিকন ভ্যালীতে যান এবং গুগলে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও তাকে গুগলের অনলাইন অ্যাডভারটাইজিং গ্রুপে কাজ করতে হয়। তখন তিনি গুগলের চাকরি ছেড়ে দেয় এবং তার আরেক বন্ধু ইভান শার্প (যে ফেসবুকের চাকরি করতো) দুইজনে মিলে একটি আইফোন অ্যাপ তৈরি করেন। দুঃখজনকভাবে তাদের অ্যাপ মার্কেটে তেমন ভালো করতে পারেনি, এখানে বার্থ হওয়ার পর তার আরেক বন্ধু পল শিয়ারা সহ তিনজনে মিলে ২০০৯ সালে পিন্টারেস্টের বেটা রিলিজ করেন। এরপর ২০১০ সালে চূড়ান্তভাবে তারা পিন্টারেস্ট রিলিজ করেন।

রিলিজ হওয়ার প্রথম ৯ মাস তাদের ইউজার সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার। এদের মধ্যে ৫ হাজারের মত ইউজার বেন সিলবারমান নিজে কালেক্ট করে। তিনি ৫ হাজার মানুষকে পার্সোনালভাবে মেইল করে এবং নিজের পার্সোনাল ফোন নাম্বার শেয়ার করে। এদের মধ্যে বেশিরভাগের সাথে তিনি সরাসরি মিটিং করেন এবং পিন্টারেস্ট ইউজ করতে বলেন।

যাইহোক, ২০১১ সালের দিকে তারা পিন্টারেস্টের আইফোন অ্যাপ রিলিজ করে। আশ্চর্যজনক ভাবে অনেক দ্রুত পিন্টারেস্ট অ্যাপ ডাউনলোড হতে থাকে। টাইম ম্যাগাজিন তাদের ২০১১ সালের ৫০ টি বেস্ট ওয়েবসাইট নামক আর্টিকেলে পিন্টারেস্টের নাম ঘোষণা করে।

কীভাবে এন্ড্রয়েড ফোন হ্যাক করা যায়?

২০১১ সালের শেষের দিকে ১০ টি বড় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সার্ভিসের তালিকায় পিন্টারেস্ট জায়গা করে নেয়। ২০১২ সালের শুরুর দিকে একটি অনলাইন রিপোর্টে বলা হয় সেই সময় পিন্টারেস্টে ১১.৭ মিলিয়ন ইউনিক ভিজিটর ছিল, যা কোন নতুন ওয়েবসাইট এতো তারাতারি এতো পরিমান ইউনিক ভিজিটর কখনোই পায়নি। সে দিক থেকে পিন্টারেস্টের এটি একটি রেকর্ড।

পিন্টারেস্ট সবথেকে বেশি ইউজ করে নারীরা। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী মোট ইউজারের মধ্যকার ৬০% নারী এবং বাকী ৪০% পুরুষ। পিন্টারেস্টে আউটফিট, হোম ডেকোরেশন, নিউ স্টাইল, ফুড রেসিপি ইত্যাদি বেশি পপুলার।

সময়ের সাথে সাথে তারা তাদের ওয়েবসাইটের কিছু পরিবর্তন আনে। শুরুর দিকে তাদের মোটিভ ছিল শুধু আইডিয়া সংগ্রহ করার প্লাটফর্ম। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের টার্মস চেঞ্জ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং ইকমার্স মার্কেটিং প্লাটফর্ম এ রূপান্তর করে। অর্থাৎ পিন্টারেস্ট এখন একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং ইকমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং প্লাটফর্ম।     

পিন্টারেস্ট কত বড়?

পিন্টারেস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে রিলিজ হয় ২০১০ সালে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ বছরের পথ পাড়ি দিয়েছে পিন্টারেস্ট। পিন্টারেস্টের বর্তমান মার্কেট প্রাইস ১২ বিলিয়ন ইউ এস মার্কিন ডলার। তারা পাবলিক কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর তাদের প্রতি শেয়ারের মূল্য ১৯ ডলার নির্ধারিত হয়।

পিন্টারেস্টের সদরদপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহরে। শুরুতে পিন্টারেস্ট একটি এপার্টমেন্ট থেকে পরিচালিত হতে থাকলেও বর্তমানে তাদের মোট কর্মী সংখ্যা ১৬০০ জন। ২০১২ সালের সফলতার পর ধীরে ধীরে ইনভেস্টরস পিন্টারেস্টে ইনভেস্ট করা শুরু করে।

তারপর থেকে নিয়মিত ভাবেই নতুন নতুন ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছে পিন্টারেস্ট। এখন পর্যন্ত পিন্টারেস্ট LiveStar, Hackermeater, Hike Labs, URX, Instapaper এবং Jelly Industry নামক কোম্পানি এবং সার্ভিস অধিগ্রহণ করেছে।

পিন্টারেস্টের আয়ের উৎস কি কি?

পিন্টারেস্টের একমাত্র আয়ের উৎস হলো স্পন্সরড বা প্রমোটেড পিন থেকে। অর্থাৎ কোন কোম্পানি বা বিজনেস তাদের নিজেদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস পিন আকারে সার্চ পেজ অথবা প্রোফাইল পেজে দেখানোর জন্য পিন্টারেস্টকে পে করে। এই পদ্ধতি ইউজ করেই তারা আয় করে। এছাড়া তাদের আরও একটি মেথড আছে যেখানে কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে তাদের চুক্তি আছে। উক্ত চুক্তির আওতায় পিন প্রমোট করে পিন্টারেস্ট তাদের রেভিনিউ গ্রো করে।

পিন্টারেস্টের ফিচার সমূহ:

পিন: পিন্টারেস্টে পোস্ট করা অর্থে পিন ফিচার ইউজ করা হয়। একটি পিনের ভিতরে আপনি টাইটেল, ডেসক্রিপশন, ট্যাগ, ইমেজ/ভিডিও/গ্রাফিক্যাল ইমেজ/লিংক ইত্যাদি দিতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা 

বোর্ড: পিন গুলোকে সুন্দর করে প্রোফাইলে সাজিয়ে রাখার জন্য বোর্ড ফিচার ব্যবহার করা হয়। এটা অনেকটা গ্রুপের মত। আপনি ইচ্ছামতো নাম দিয়ে বোর্ড তৈরি করতে পারবেন এবং ইচ্ছামতো শেয়ার করতে পারবেন।

রিপিন: টুইটারে যেমন রিটুইট ফিচার আছে পিন্টারেস্টে তেমন রিপিন। রিপিন ফিচার ইউজ করে আপনি আপনার পছন্দের পিন আপনার প্রোফাইলে শেয়ার করতে পারবেন।

ফলো: আপনি চাইলে কোন ইন্ডিভিজুয়াল বা কোম্পানিকে ফলো করতে পারবেন। ফলো করার উপকারিতা হল লগইন করার পর আপনাকে আর আপনার পছন্দের পিন খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে না। কারন পিন্টারেস্ট ফলো করা প্রোফাইলের পিন প্রথমে দেখায়।

লাইক/লাভ বাটন: অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে পিন্টারেস্ট লাইক/লাভ বাটন একটু ভিন্ন। কোন পিন বা বোর্ডে লাইক/লাভ দিলে সেটা সরাসরি প্রোফাইলে অ্যাড হয়। উক্ত পিন বা বোর্ডে কোন লাইক/লাভ যুক্ত হয়না।

পিন্টারেস্ট শুধু একটি অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক না। এটি একটি অ্যাপ এবং ওয়েবভিত্তিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম যা ফ্রীতে ইউজ করা যায়। সহজেই নিজের পণ্য এবং সার্ভিস কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। আশাকরি আজকের লেখা পড়ে পিন্টারেস্ট সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। পিন্টারেস্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।   

This Post Has 2 Comments

  1. Hasibul

    অনেক কিছু জানতে পারলাম

Leave a Reply